Best Seller Books

random/hot-posts

                 যাকাতের আধুনিক মাসায়েল             মুফতি তাকি উসামনি দাঃ বাঃ বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম. "সূচনা পর্ব " মুহতারাম ...

               যাকাতের আধুনিক মাসায়েল         

মুফতি তাকি উসামনি দাঃ বাঃ

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম.

"সূচনা পর্ব "

মুহতারাম সুধীমন্ডলী ও ধর্মপ্রাণ শ্রোতাদর্শক! আজকের সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ব 'যাকাত' -এর বিষয়কে কেন্দ্র করে।পবিত্র মাহে রমযানের মাত্র কয়দিন পূর্বেই এই বিষয়বস্তুর ওপর সেমিনারটির ব্যবস্তাপনা এজন্যই করা হচ্ছে,  যেহেতু ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা সাধারণত, রমযানের এই পবিত্র মাসেই যাকাতের অর্থ বের করে এর প্রাপক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তা বিতরণ করে থাকেন। তাই সেমিনারটি অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য হচ্ছে, যাকাতের গুরুত্ব, ফযীলত এবং জরুরী আহকামগুলো এই সেমিনার থেকে আমাদের দৃষ্টির সামনে নিয়ে আসা। আর সেই অনুযায়ী আমল করার পথ খুঁজে নেয়া।


"যাকাত না দেয়ার ভয়াবহতা "
ভূমিকায় আমি দুটো আয়াত তিলাওয়াত  করছি। উল্লিখিত আয়াত দু্টোতে যারা নিজেদের সম্পদের পরিপূর্ণ ও পুঙ্খানুপুঙ্খ যাকাত আদায় থেকে বিরত থাকে মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলা তাদের ব্যাপারে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন। জাহান্নামে তাদের ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ঘোষনা দিয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা কুরআনের আয়াতে ঘোষনা করেছেন,যেসব ব্যক্তি নিজের কাছে স্বর্ণ রৌপ্য জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাহে ব্যয় করে না,(হে রাসূল!) আপনি তাদেরকে ভয়াবহ শাস্তির সংবাদ জানিয়ে দিন।অর্থাৎ, যে ব্যক্তি নিজের টাকাকড়ি, নিজের স্বর্ণ-রৌপ্য পুঞ্জীভূত করে রাখে এবং আল্লাহর রাস্তায় খরচ করা থেকে বিরত থাকে, তাদেরকে আপনি এ সুসংবাদ জানিয়ে দিন যে,তাদের জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে।অতঃপর দ্বিতীয় আয়াতে শাস্তির ভয়াবহ বিবরণ তুলে ধরে বলা হয়েছে, এই ভয়াবহ শাস্তির সম্মুখীন ওইদিন হতে হবে, যেদিন এই স্বর্ণ-রৌপ্য আগুনে উত্তপ্ত করা হবে। অতঃপর সেই ব্যক্তির কপাল, পার্শ্বদেশ এবং পৃষ্ঠের উপর দাগ লাগানো হবে।সেই সঙ্গে তার উদ্দেশ্যে বলা হবে।

 هذا ما کترتم لأننفسکم فذوقواماکنتم تکترون

এই হল সেই ভান্ডার!যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা করে রেখে ছিলে।সুতরাং আজ তোমরা তোমাদের ভান্ডারের আস্বাদ গ্রগন কর।[সূরা তওবা আয়াত -৩৪-৩৫] 

আল্লাহ তাআলা প্রত্যেক মুসলমানকে এজাতীয় করুন পরিনতি থেকে রক্ষা করুন।  আয়াতে ওইসব মানুষের পরিনতির কথাই বলা হয়েছে,  যারা অর্থকড়ির ধনভাণ্ডার গড়ে তুলেছে;কিন্তু তার ওপর আল্লাহ কর্তৃক অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছে না।শুধু এই আয়াতেই বা কেন? আরো বহু আয়াতেই এজাতীয় কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সূরা হুমাযাহ তে ইরশাদ হয়েছে:

ويل لکل همزةلمزة.الذي جمع مالأوعدده. يحسب ان ماله أخلده. کۭلالينبذن فی الحطمة. وماأدراك ماالحطمة. نارللّٰه الموُقدة. التی تطلع علی الأفءدة. انها عليهم موٴصدة.فی عمد `ممددة 

পশ্চাতে ও সম্মুখে প্রত্যেক পরনিন্দাকারীর দুর্ভোগ। যে অর্থ সঞ্চিত করেও গণনা করে।সে মনে করে যে, তার অর্থ চিরকাল তার সঙ্গে থাকবে।কখনো না।সে অবশ্যই নিক্ষিপ্ত হবে পিষ্টকারীর মধ্যে।আপনি কি জানেন! পিষ্টকারী কি জিনিস?এটা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি।যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে।এতে তাদেরকে বেঁধে দেয়া হবে।লম্বা লম্বা খুঁটিতে।[সূরা হুমাযাহ] বর্নিত আয়াতগুলোতে যাকাত অনাদায়ের বিষয়ে খোদায়ী যে কঠোর শাস্তি অপেক্ষা করছে, তারই কিঞ্চিত আলোচনা রয়েছে। আল্লাহ তাআলা  আমাদের কে এই ভয়াবহ শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমীন!


হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানবী (রহ.)'তাফসীরে বয়ানুল কুরআনে 'সূরাটির অর্থ এই ভাষায় ব্যাখ্যা করেছেন:

'ওই ব্যক্তির জন্য ভয়াবহ শাস্তি অপেক্ষা করছে যে, দোষত্রুটি অনুসন্ধানে লিপ্ত এবং নিন্দুকের ভূমিকায় অবতীর্ণ। যে সম্পদ সঞ্চয় করে এবং তা গননা করে।(প্রতিদিন এই গননা করে যে, আজ আমার সম্পদে কি পরিমান  বৃদ্ধি পেয়েছে। গননার সঙ্গে সঙ্গে আত্নিক পরিতৃপ্তির ঢেকুর ও তুলে থাকে বেশ আয়েশের সঙ্গে) সে মনে করছে এই সম্পদ অনন্তকাল আমার জন্য অব্যাহত থাকবে। কখনো নয়।(স্বরণ রাখ!এই সম্পদ যা সে গণন করে সংরক্ষণ করছে অথচ সেই সম্পদের অপরিহার্য করণীয় কাজ করছে না।
এই কারনেই তাকে নিক্ষেপ করা হবে৷[حطمة]'পিষ্টকারী' (অগ্নি)র মধ্যে।আপনি কি জানেন (হুতামাহ) 'পিষ্টকারী' কি জিনিস?এই[হুতামাহ] `পিষ্টকারী যার মধ্যে তাকে নিক্ষেপ করা হবে) এটি এমন অগ্নি যা সরাসরি আল্লাহ কর্তৃক প্রজ্জ্বলিত। (এটি কোনো মানব সন্তানের প্রজ্জ্বলিত অগ্নি নয়,যা পানির সাহায্যে, মাটির সাহায্যে নিভে যাবে, কিংবা যাকে ফায়ার বিগ্রেড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে; বরং এটি আল্লাহ প্রজ্জ্বলিত অগ্নি) যা মানুষের হৃদয়ান্তর জ্বালিয়ে ছারখার করে দেবে।(মানুষের হৃদয়ান্তর পর্যন্ত তা পৌঁছে যাবে।)'

(এই সম্পদ  কোথেকে আসছে?)
যাকাত না দেওয়ার কারণে এত কঠোর সতর্কবাণী কেন উচ্চারণ করা হয়েছে? এর কারণ হল যে,মানুষ দুনিয়ার বুকে যে সম্পদ উপার্জন করে,চাই তা ব্যবসা_বানিজ্যের মাধ্যমে হোক,সামান্য চিন্তা করলে বোঝা যাবে যে,এই সম্পদ কোথেকে আসছে? মানুষের মধ্যে কি এই শক্তি-সামর্থ্য এবং ক্ষমতা ছিল যে, সে নিজ বাহুবলে তা অর্জন করতে পারে? এতো আল্লাহ বিনির্মিত একটি সূক্ষ্ম বিধানের আওতায় সম্ভব হয়েছে। আল্লাহ তাআলা তোনিজ নিযামের আওতায় এসব কিছু সম্পাদন করেছেব।

(ক্রেতা কে প্রেরণ করেন?)
কেউ হয়তো মনে করতে পারেন যে,আমি দোকান খুলেছি এবং দোকানে পন্যদ্রব্য উঠিয়েছি।আর দোকানে বসে বসে পণ্যদ্রব্য বিক্রয় করেছি বলেই আমার হাতে অর্থকড়ি এসেছে। কিন্তু আমরা কি কখনো একথা চিন্তা করে দেখেছি যে,আমরা যখন দোকান খলে বসি তখন আমাদের কাছে ক্রেতা কে পাঠিয়ে থাকেন? আপনি দোকান খুলে বসলেন,অথচ একজন ক্রেতা ও দোকানে আসল না,তাহলে কি আপনার দোকানের পণ্যদ্রব্যবিক্রয় হত? বা কোনো অর্থকড়ি আমদানি হত? ওই মহান সত্তা কে, যিনি আপনার কাছে ক্রেতা প্রেরণ করেছেন?আল্লাহ তায়ালা দুনিয়ার নিয়মটাই এভাবে সাজিয়েছেন যে, একে অপরের প্রয়োজন, একে অপরের জরুরত একে অপরের মাধ্যমে সমাধান করে থাকেন। একজনের অন্তরে তিনি দোকান খুলে বসার ইচ্ছা জাগিয়ে দেন,আর অপরের অন্তরে জাগিয়ে দেন দোকান থেকে ক্রয় করে আনার ইচ্ছা।

👉একটি শিক্ষনীয় ঘটনা 
আমার এক বড়ভাই ছিলেন মুহাম্মদ যকী কায়ফী(রহঃ)।ইদারায়ে ইসলামিয়াত' নামে লাহোরে তার একটি ধর্মীয় লাইব্রেরি ছিল। বর্তমানেও  লাইব্রেরীটি আছে।  কথা প্রসঙ্গে তিনি একবার বলেছিলেনঃ 'ব্যবসা-বানিজ্যেও আল্লাহ তাআলা নিজের কুদরত ও কারিশমা প্রদর্শন করে থাকেন। একদিন সাতসকালেই আমি ঘুম থেকে জেগে গেলাম। শহরময় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। রাস্তা ঘাট পানির নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। অন্তরে অন্তরে কল্পনা করছিলাম,আজ বৃষ্টির দিন। মানুষ ঘর থেকে বের হতে ভয় পাবে।রাস্তায় পানি কাঁদা জমে আছে।এই অবস্তায় কিতাব কেনার জন্য কে আসবে দোকানে?এছাড়া আমার দোকানের কিতাব তো আর পার্থিব কোনো বিষয়ের নয়। ধর্মীয় কিতাবের দোকান  আমারটি।আর ধর্মীয় কিতাবের ব্যাপারে আমাদের বর্তমান সমাজের চিত্র হলো,পার্থিব এবং জাগতিক সববিষয় কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেলে তখন মনে হয়, ঠিক আছে ধর্মীয় দু- একটি কিতাবও নিয়ে নেয়া যাক।এগুলো  পাঠ করে তো আর ক্ষুধা নিবারণ হয় না।কেননা আখেরাতের বিষয় ছাড়া দুনিয়ার কোনো সমস্যার সমাধান এসব কিতাবে নেই।তারপর ও নিয়ে রাখলে সময় সুযোগ  হলে চোখ বুলিয়ে নেয়া যেতে পারে। সমাজ ধর্মীয় কিতাবকে বরং একটি অপ্রয়োজনীয় বিষয়ই মনে করে থাকে। তাই এই মোষলধারে বৃষ্টির মধ্যে আর কোন ব্যক্তি ধর্মীয় কিতাব ক্রয় করতে  আসবে? এই কল্পনার সাগরে  ঘুরপাক খেতে খেতে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম যে,আজ আর দোকান খুলব না।' কিন্তু যেহেতু তিনি হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহমাতুল্লাহি আলাইহি এর মতো বর মাপের বুযুর্গদের সাহাচার্য লাভ করে ছিলেন, তাই পরক্ষণেই তার অন্তরে এই কল্পনা ও আসল- ঠিক আছে কিতাব ক্রয় করতে কেউ আসুক আর নাই আসুক,যেহেতু এই ব্যবসাকেই আল্লাহ তাআলা  আমার রিযিকের মাধ্যম বানিয়েছেন। তাই আমার কাজ হল বাজারে গিয়ে দেকান খুলে বসা।ক্রেতা পাঠানো আমার কাজ নয়।এতো অন্য  কারো কাজ।সুতরাং
আমাকে আমার চেষ্টা -প্রচেষ্টায় ত্রুটি করা অনুচিত। বৃষ্টি হোক,ঝড় বা তুফান  আসুক আমাকে আমার দোকান খুলে বসা উচিত। এই সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে  মাথায় ছাতা উঠিয়ে পানি ভেঙ্গেই দোকানে চলে  আসলাম। দোকান খোলার পর চিন্তা করলাম, আজ তো আর কোনো ক্রেতা আসবে না,তাই বেকার বসে থেকে লাভ কি? এই সুযোগে কুরআন তিলাওয়াত করলে মন্দ  হয় না। তাই কুরআন শরীফ খুলে তিলাওয়াত করার জন্য বসেছি মাত্র।এরই মধ্যে দখা গেল,মানুষ ছাতা মাথায় পানি ভেঙ্গে  কিতাব কেনার জন্য ছুটে আসছে। অবস্হা দেখে আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছিলাম। মানুষের এমন কী তীব্র প্রয়োজনীয়তা দেখা দিল যে,ঝড় তুফান উপেক্ষা করে তলিয়ে যাওয়া রাস্তা-ঘাটের পানি ভেঙ্গে কিতাব কেনার জন্য আসছে! এই কিতাব এখন না কিনলেও তো চলতো! কিন্তু তারপর ও ক্রেতা আসার জোয়ার থামল না।অন্যান্য দিন যা বিক্রি হত আজ ও তাই বিক্রি হলা এসময় আমার অন্তরে দৃরভাবে এই কথা বদ্বমূল হল যে,প্রকৃত অর্থে ক্রেতা সেচ্চায় আসে না।তাকে অন্য কেউ প্রেরন করে থাকেন। আর তিনি
ক্রেতাকে এজন্য প্রেরণ  করে থাকেন যে,তিনি আমার রিযিকের মাধ্যম বানিয়েছেন ওই ক্রেতাকে।


"" কাজের বন্টন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ""
প্রকৃতপক্ষে এটি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে প্রদত্ত নিযাম।যিনি ক্রেতার অন্তরে দোকানে আসার ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছেন। তিনিই নিজ ব্যবস্তাপনার মাধ্যমে সবকিছু সুষ্ঠু সুন্দরভাবে পরিচালনার দায়িত্ব আনজাম দিচ্ছেন। কোনো ব্যক্তি কি এমন কোনো কনফারেন্স আহ্বান করেছিল যেখানে এই সিদ্ধান্ত হয়েছিল যে,এতোজন কাপড় ক্রয় করবে,এতোজন জুতো ক্রয় করবে,এতোজন চাল ক্রয় করবে আর এতোজন বাসনপত্র ক্রয় করবে?আর এভাবেই মানুষের জীবনের প্রয়োজন মিটবে।দুনিয়ার বুকে আজ পর্যন্ত এজাতীয় কোনো কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয় নাই; বরং আল্লাহ তাআলা কারো অন্তরে ইচ্ছা
জাগিয়ে দিয়েছেন, তুমি কাপড় ক্রয় করে নিয়ে আস,কারো অন্তরে জুতা ক্রয়ের ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছেন, কারো অন্তরে রুটি ক্রয়ের ইচ্ছা জাগিয়ে দিয়েছেন। আবার কারো অন্তরে জাগিয়ে দিয়েছেন গোশত ক্রয় করার ইচ্ছা। এই ফলাফল এই দারিয়েছে যে, দুনিয়ার এমন কোনো প্রয়োজন নেই যার সমাধান বাজারে হয় না। অপরদিকে ক্রেতাদের অন্তরে ও তিনি এ বিষয়টি রেখে দিয়েছেন যে,তোমরা বাজারে গিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ক্রয় করে নিয়ে আস।এটাই হল খোদা প্রদত্ত নিযাম।তিনি এভাবেই সব মানুষের রিজিকের ব্যবস্তা করে দিচ্ছেন।


"" মাটি থেকে কে উৎপন্ন করেন? "" 

ব্যবসা- ব্যণিজ্য হোক,কৃষিকাজ বা চাকুরী-বাকুরী হোক,প্রকৃতপক্ষে সবকিছুর প্রদায়ক একমাত্র আল্লাহ
তায়ালা। দৃষ্টান্ত হিসেবে কৃষি উৎপন্নের কথাই উল্লেখ করা যেতে পারে।কৃষি উৎপন্নের ক্ষেত্রে মানুষের
কাজ হলো যে,হাল আর চাষবাসের মাধ্যমে জমিন নরম করে তাতে বীজ বপন করা।মাঝে মধ্যে সেচ পানির ব্যবস্তা করা। কিন্তু ওই বীজ থেকে চাড়া গজানো,যে বীজ একেবারেই হিসাবের গন্য ছিল না,যা ছিল খুবই হালকা পাতলা ;তারপর ও এই দূর্বল বীজটি শক্ত মাটি চিরে গজিয়ে ওঠে। খুবই নাজুক কেশর পল্লব নিয়ে দুনিয়ার বুকে তার আগমন ঘটে।একজন অবুঝ শিশু ও যদি তাকে স্পর্শ করে তাহলে সে নিমিষেই ধ্বংস হয়ে যায়।কিন্তু নাজুক এই চাড়াটি মওসুমের ঝড়-তুফানের সঙ্গে যুদ্ধ -জিহাদ করে ক্রমান্বয়ে বেড়ে ওঠে। প্রখর  রৌদ্রের উত্তাপ,মুষলধারে বৃষ্টি, শুষ্ক -গরম,অপ্রতিকুল আবহাওয়া কোনো কিছুই তার বৃদ্ধির পথ রুদ্ব  করতে পারে না। গজিয়ে ওঠা সেই চারাটিই  একদিন পরিপক্ব হতে থাকে। তার মধ্যে কলি আসে,ফুল ও ফল বের হয়।এভাবে একদিন মানব জাতিরজন্য উপযোগ্য হিসেবে গড়ে ওঠে এবং সময়মত তা মানুষের কাছে পৌঁছে যায়। মানুষ তার দ্বারা উপকৃত হয়।জীবন ধারণ করার পথ খুঁজে পায়।কোন সত্ত্বা যিনি এই কাজটি করছেন? মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলাই এসব কিছু করছেন। এতে বিন্দু মাত্র সন্দেহ নেই।


"" সৃষ্টি করার যোগ্যতা মানুষের মধ্যে নেই""
সুতরাং আমদানির মাধ্যম যাই হোক, হোক ব্যবসা-বানিজ্য,হোক কৃষিকাজ বা চাকুরী -বাকুরী।প্রকৃতঅর্থে দুনিয়ার বুকে মানুষকে একটি সীমাবদ্ধ কাজের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে। সুতরাং মানুষ সেই  সীমাবদ্ব কাজই সম্পাদন করে থাকে। কিন্তু ওই সীমাবদ্ধ কাজের মধ্যে কোনো জিনিস সৃষ্টি করার যোগ্যতা মানুষকে দেয়া হয় নাই। সৃষ্টি করার দায়িত্ব একমাত্র মহান রাব্বুল আলামীন আল্লাহ তাআলার নিয়ন্ত্রণে।তিনিই প্রয়োজনীয় বস্তু সৃষ্টি করে থাকেন এবং তা মানব জাতির কল্যাণে দিয়ে
থাকেন। সুতরাং যা কিছু মানবজাতির কাছে আছে, সবকিছু আল্লাহ তাআলা প্রদত্ত।তার নিয়ন্ত্রণেই সব কিছু। এ সম্পর্কে প্রবিত্র কুরআনে ইরশাদ হচ্ছে :لله مافی السموات وما فی الأرضআসমান
জমিনে যা কিছু আছে, সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা বা মালিকানা একমাত্র আল্লাহ তাআলার।[সূরা বাকারাঃআয়াত ২৮৪]


"" প্রকৃত মালিক আল্লাহ তাআলা ""
আল্লাহ তাআলা সবকিছু সৃষ্টি করে মানব জাতিকে জানিয়ে দিলেন, এখন এ সব কিছুর তোমরাই মালিক। সূরা ইয়াসিনে এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা  ইরশাদ করেছেনঃ
أولم يرواأنا خلقنا لهم مما عملت أيديناأنعاما فهم لها مالکون.
`তারা কি দেখে না, তাদের জন্য আমি আমার নিজ হাতের তৈরি বস্তুর দ্বারা  চতুষ্পদ জন্তু সৃষ্টি করেছি,অতঃপর তারাই এগুলোর মালিক।′[সূরা ইয়াসিনঃ আয়াত-৭১]


প্রকৃত মালিক তো আল্লাহ তাআলা ছিলেন এবং আছেন। তিনিই মানবজাতিকে তার মালিক বানিয়ে দিয়েছেন। তাহলে বোঝা গেল,যে সম্পদ মানব জাতির হস্তাগত হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে বড় হক হল আল্লাহ তাআলার।যেহেতু সম্পদে প্রকৃত হক আল্লাহ তাআলার প্রতিষ্ঠিত ;সুতরাং এই সম্পদ ব্যয় করতে হবে আল্লাহ তাআলারই নির্দেশ মোতাবেক। যদি আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক খরচ করা হয়,তাহলে অবশিষ্ট সম্পদ মানুষের জন্য হালাল এবং পবিত্র হিসেবে গন্য হবে। তা মানব জাতির জন্য হবে আল্লাহর কৃপা হিসেবে, আল্লাহর নেয়ামত হিসেবে। সেই সম্পদ হবে বরকতময় সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। আর যদি সম্পদ থেকে আল্লাহ তাআলা ধার্যকৃত পরিমাণ বের করা না হয়,তাহলে সমুদয় সম্পদ মানুষের জন্য আগুনের আঙ্গার হিসেবে পরিণত হবে।কিয়ামতের ময়দানে আগুনের আঙ্গারের ভয়াবহতা তখনই অনুধাবন করতে পারবে,যখন তা দ্বারা দাগ লাগানো  হবে।আর সেদিন মানুষের উদ্দেশ্য  বলা হবে যে, 'এগুলোই হলো সেই ভান্ডার, যা তোমরা দুনিয়ার বুকে জমা করে রেখেছিলে।

"শ'তে মাত্র  আড়াই টাকা দিয়ে দাও"
যদি আল্লাহ তায়ালা এহেন দাবি করতেন  যে,এই সম্পদ আমার দেয়া। তা থেকে শতকরা আড়াই টাকা তুমি রাখ।আর শতকরা সারে সাতানব্বই টাকা আমার রাহে ব্যয় করে দাও।তাহলে এটি ইনসাফ পরিপন্তি ছিল না।কেননা পুরো সম্পদটাই তো তার
দেয়া সম্পদ।এর সম্পূর্ণ মালিকানা ও
নিয়ন্ত্রণ তারই হাতে। তবে তিনি তাঁর
বান্দাহর প্রতি অপার অনুগ্রহ করে বলেছেন যে,আমি জানি, তোমরা দূর্বল!তোমাদের সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে। আমি জানি,তোমাদের অন্তরের আকর্ষন সম্পদের প্রতি তীব্র।সুতরাং যাও, এই সম্পদের  শতকরা সারে সাতানব্বই শতাংশই
তোমাদের জন্য। আমার প্রত্যাশা শ'তে মাত্র আড়াই শতাংশ। এই আড়াই শতাংশ যখন তোমরা আমার
রাহে খরচ করবে,তখন অবশিষ্ট সারে
সাতানব্বই শতাংশই তোমাদের জন্য
হালাল পবিত্র এবং বরকতময় হয়ে
যাবে।আল্লাহ এই স্বল্প সামান্য প্রত্যাশা পূরণের ঘোষনা দিয়ে সমুদয়
সম্পদ আমাদের কাছে অর্পণ করে
দিয়েছেন এবং এই সম্পদ আমাদের
ইচ্ছা মাফিক ব্যয় করার অনুমতি দিয়েছেন।


""যাকাতের তাগিদ ""
ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল নামাজ।কুরআনে কারীমের যেখানেই নামাজের কথা উল্লেখ হয়েছে, পাশাপাশি সেখানেই উল্লেখ হয়েছে যাকাতের কথা। [أقيموا اللصلوِة واتواالز کوة ] নামায কায়েম কর, যাকাত প্রদান কর'।কুরআনে এই ঘোষণা অসংখ্যবার উল্লেখ  হয়েছে। এ থেকেই  বোঝা যায়,যাকাতের কতো গুরুত্ব রয়েছে ইসলামে।কিন্তু এই নির্দেশ জারির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দাহর ওপর কোনো বোঝা চাঁপিয়ে দেননি; বরং বান্দাহর ওপর তিনি  যে কতো বড় ইহসান করেছেন,কতো যে দয়া ও অনুগ্রহ করেছেন,তা বর্ননা দিয়ে শেষকরা যাবে না। তিনি বান্দাহকে ধন-সম্পদ দিয়েছেন। এর সত্তাধিকারীওতিনি বান্দাহকে বানিয়েছেন। এরপরতিনি বান্দাহকে নির্দেশ দিয়েছেন,বার্ষিক শতকরা মাত্র আড়াই ভাগ হারে আমার রাহে দিয়ে দাও। আল্লাহ এই নির্দেশের পর একজন মুসলমানকে নির্দ্বিধায় শতকরা আড়াই ভাগ হারে বিলিয়ে দেয়া একটি জরুরি বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। আর এতটুকু করার দ্বারা কারো ওপর আসমান ভেঙ্গে পড়ার কথা নয়।এতটুকু করলে কিয়ামত হয়ে যাবে এমনটি ভাবাও ঠিক নয়।


"" যাকাত অনাদায় সম্পদ ধ্বংসের কারণ ""
এক হাদিসে নবী করিম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ'কারো সম্পদের সঙ্গে যাকাতের টাকা সংমিশ্রিত হলে(যাকাতের পুরো টাকা আদায় না করে কিছু আদায় কিছু সম্পদের সঙ্গে সংমিশ্রিত করে নিলে)ওই সম্পদ মানুষের ক্ষতি ও ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এজন্যই কানাকড়ি হিসাব করে যাকাতের টাকা পৃথক করে নেয়া একটি জরুরি বিষয়। এতদভিন্ন যাকাতের নির্দেশ 
পূণাঙ্গরুপে প্রতিপালিত হয় না।তাই যারা এহেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে হেলাফেলা করে,আর যাকাতের আংশিক নিজের সম্পদের মাঝে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়, এটি তাদের জন্য শুভ ও কল্যাণকর কোনো বিষয় নয়;বরং এটি তাদের জন্য ধ্বংস ও মারাত্নক
ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
[মিশকাত শরীফঃখন্ড-১,পৃষ্ঠা -১৫৭]


"যাকাত আদায়ে পার্থিব উপকারিতা"
সম্পদ থেকে যাকাতের টাকা বের করার সময় নিয়ত করে নেবে, এটি আল্লাহ তাআলার একটি নির্দেশ। তার রেযা ও সন্তষ্টি আমার কাম্য।এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ খোদায়ী ইবাদত।যাকাত আদায়ের মাধ্যমে আামার কোনো ফায়দা হোক বা না হোক,এতে আামার কিছু যায় আসে না।আামার মূখ্য উদ্দেশ্য হল খোদায়ী
নির্দেশের প্রতিপালন।এমনটি নিয়ত করে যাকাত আদায় করলে এর বিশাল প্রতিদান রয়েছে। আল্লাহ তাআলা তার সম্পদে বরকত দান করবেন।কুরআানে কারীমে এ সম্পর্কে ইরশাদ হচ্ছ [يمحق الله الربوا ويربی الصدقات] আল্লাহ তাআলা সুদ মিটিয়ে দেন আর যাকাতের মাধ্যমে প্রবৃদ্ধি দান করেন। (সুরা বাকারাঃ আয়াত- ২৭৬)
এক হাদিসে রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাকাত আদায়কারীদের সুসংবাদ প্রদান করে ইরশাদ করেছেনঃ  اللهما أعط منفقا خلفاوأعط ممسکن تلفا
[এদের ব্যাপারে ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে এই বলে দুয়া করতে থাকেন ]হে' আল্লাহ!  তোমার রাহে যে ব্যক্তি খরচ করছে,তার সম্পদে আরো প্রবৃদ্ধি দান কর।হে আল্লাহ!  যে ব্যক্তি নিজের সম্পদ কুক্ষিগত করে রাখেএবং যাকাত আদায়  থেকে বিরত থাকে, তার সম্পদ ধ্বংস ও বরবাদ করে দাও। এ
জন্যেই তো বলা হয়ে থাকেঃ[ما نقصت صدقة من مال]দান -খয়রাত সম্পদ হ্রাস করে না।আর একারণে ই দেখা যায়, যে মুসলমান সঠিক পদ্ধতিতে যাকাত আদায় করে,আল্লাহ তায়ালা তার জন্য আমদানির নতুন উৎসদ্বার
উন্মুক্ত করে দেন।প্রদত্ত যাকাতের টাকার চেয়ে অধিক টাকা তার হস্তগত হয়।আবার কোনো কোনো সময় যাকাত আদায়ের দ্বারা সম্পদে
বাহ্যিক পরিমাণ হ্রাস অনুভূত হলেও
বিশাল বরকত পরিলক্ষিত হয়।স্বল্প
সম্পদের উপকারিতা ধরা দেয় বেশুমার।


"সম্পদে বরকত হীনতার পরিণাম"

বর্তমান মান দুনিয়া হল হিসাবের দুনিয়া।বরকতের অর্থ মানুষের কাছে  বোধগম্য নয়।বরকত তো ওই জিনিস  কে বলা হয় যে,অল্পস্বল্প জিনিসের উপকারিতা ব্যাপক।দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যেতে পারে, এক ব্যক্তি বহু অর্থ
কড়ি উপার্জন করে বাড়ি এসে দেখল  তার সন্তান অসুস্থ। তাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হল।পরীক্ষা-নিরিক্ষা করে প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী ঔষধপত্র কেনা হলো।এসব  করতে গিয়েই তার সব টাকা-পয়সা  খরচ হয়ে গেল।এর অর্থ দারাল যে, সে যা উপার্জন করেছে তাতে কোনো বরকত হয় নাই। কিংবা কোনো ব্যক্তি টাকাকরি উপার্জন করে বাড়ি আসছিল।রাস্তায় ছিনতাইকারীর সাথে তার সাক্ষাৎ হলো।ছিনতাইকারী পিস্তল ঠেকিয়ে তার সমুদয় অর্থ ছিনিয়ে নিল।এরও অর্থ হলো তার উপার্জিত অর্থে বরকত হয় নাই।অথবা টাকা উপার্জন করে কেউ
খুব মজা করে খাওয়া-দাওয়া করল এর ফলে তার পেটে সমস্যা দেখা দিল বোঝা গেল এই টাকায় বরকত হয় নাই।বর্নিত অবস্তাগুলো বরকতহীনতার আলামত।
আর বরকত হল এই যে,আপনি টাকা কড়ি উপার্জন করলেন একেবারে সামান্য, কিন্তু এই সামান্য অর্থের দ্বারাই আল্লাহ তাআলা বিশাল বিশাল
কাজ করিয়ে দিলেন।একেই বলা হয়  বরকত।আল্লাহ তায়ালা এই বরকত তাকেই দান করেন যে,আল্লাহ তায়ালার বিধিবিধান অনুযায়ী চলে।সুতরাং আমাদের জন্য নিজ সম্পদের যাকাত বের করা জরুরি। এবং তা অব্যশই ওই তরীকা অনুযায়ী  বের করতে হবে, যে তরীকা আল্লাহ এবং তার রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতলে দিয়েছেন।কেবল
অনুমান নির্ভর যাকাতের অর্থ পৃথক করা ঠিক নয়।


""যাকাতের নিসাব""
অল্প বিস্তর বিবরনে একথা বলা যায় যে, আল্লাহ তাআলা যাকাতের একটি  নিসাব নির্ধারণ করেছেন।যাদের হাতে নিসাবের কম সম্পদ থাকবে তাদের ওপর যাকাত ফরয নয়।নিসাব পরিমাণ সম্পদ হলে যাকাত ফরয হবে।যাকাতের নিসাব হলো,  সারে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সারে সাত তোলা স্বর্ণ,অথবা সমমূল্যমান নগদ অর্থ।,কিংবা অলংকার, ব্যবসায়িক মাল ও আসবাবপত্র ইত্যাদি। যে ব্যক্তির কাছে উল্লিখিত  পরিমাণ সম্পদ থাকবে তাকে বলা হবে 'ছাহেবে নিসাব'বা নিসাবের মালিক।[ফতওয়ায়ে শামীঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -৩১]


"প্রতি টাকায় বছর অতিবাহিত হওয়া  জরুরি নয়"
কারো কাছে  নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তা তার কাছে এক বছরকাল
থাকা জরুরি। এর অর্থ হল,এক বছর  পর্যন্ত নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলেই তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়।এক্ষেত্রে অবশ্য সমাজে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে,নিসাবের প্রতিটি টাকায় পূর্ণ এক বছর অতিবাহিত হওয়া জরুরি।কিন্তু  এমন ধারণা সঠিক নয়;বরং বছরের শুরুতে কোন এক ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলো এবং পরবর্তী বছরের একই দিনে সেই ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকলে ওই ব্যক্তি সাহেবে নিসাব সাব্যস্ত হবে। বছরের মধ্যবর্তী সময়ে তার সম্পদ যে আপ-ডাউন  হয়েছে তা দেখার বিষয় নয়। সুতরাং এক রমযানের প্রথম তারিখে যদি তার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকে,তাহলে (শতকরা আড়াই টাকা হারে) যাকাত আদায় করতে হবে।এক্ষেত্রে পরবর্তী রমযানের প্রথম তারিখে তার কাছে যত টাকা  বিদ্যমান থাকবে তারই যাকাত দিতে হবে।উক্ত টাকার  কিছু পরিমান যদি যাকাত আদায়ের নির্ধারিত দিনের একদিন পূর্বেও হস্তাগত হয়ে যায়, তবুও তার যাকাত দিতে হবে।[আহসানুল ফাতা ওয়াঃ খন্ড-৪ পৃষ্ঠা-২৫৫]


"মালিকানাধীন সমুদয় অর্থের  যাকাত আদায় করা জরুরি "
এক ব্যক্তির কাছে রমযানের প্রথম তারিখে ছিল একলাখ টাকা। পরবর্তী বছর পয়লা রমজানের দু'দিন পূর্বে আরো  ৫০ হাজার টাকা যোগ হয়ে তার টাকার পরিমাণ দাঁড়াল দেড়লাখ টাকা।এই অবস্তায় তাকে দেড়লাখ টাকার যাকাত আদায় করতে হবে।এক্ষেত্রে একথা বলার অবকাশ নেই যে, পঞ্চাশ হাজার টাকা তো মাত্র দুইদিন আগে তার হস্তাগত হয়েছে। পুরো দেরলাখে এক বছর তো আর অতিবাহিত হয়নি।সুতরাং এই পঞ্চাশ হাজারে যাকাত ফরয হওয়া অনুচিত। এক্ষেত্রে ফাক- ফোকর বের করার কোনো অবকাশ শরীয়ত দেয় নাই। বরং নিসাবের মালিক হওয়ার পর একবছর পূর্ণ হওয়ার দিন সে যে পরিমাণ অর্থ-সম্পদের মালিক থাকবে সেই পরিমাণ সম্পদের যাকাত দেয়া তার ওপর ওয়াজিব। পয়লা রমযানে একলাখ টাকার মালিক থাকার পর পরবর্তী রমযানে দেড়লাখ টাকা হলে দেড়লাক টাকারই যাকাত আদায় করতে হবে,তদ্রুপ যদি পরবর্তী রমযানে টাকার অংক হ্রাস পেয়ে পঞ্চাশ হাজারে দাঁড়ায় তাহলে যাকাত পঞ্চাশ হাজার টাকারই আদায় করতে হবে।বছরের মধ্যবর্তী সময়ে যে টাকা খরচ হয়ে গেছে, তার কোনো হিসাব-নিকাস নেই। খরচ হয়ে যাওয়া টাকার ওপর যাকাত আদায় করার কোনো প্রয়োজন নেই। হিসাব- নিকাশের জটিলতা থেকে বাঁচানোর লক্ষ্যেই আল্লাহ তাআলা যাকাত আদায়ে শরীয়তের এই সহজ পদ্ধতিটি তার বান্দাহর জন্য চয়ন করছেন। বান্দাহকে তিনি সুযোগ দিয়েছেন বছরের মাঝের সময়ে তুমি যা পানাহার করলে, প্রয়োজনে ব্যয় করলে তার  হিসাব তোমার থেকে নেওয়া হবে না। তাই বছরের মাঝে যে টাকা হস্তগত হয় তার জন্য স্বতন্ত্র কোনো হিসাব রাখার প্রয়োজন নাই; বরং বছর শেষে যে অর্থ - সম্পদ হাতে বিদ্যমান থাকবে, হিসাব অনুযায়ী তার যাকাত আদায় করতে হবে। বছর অতিবাহিত হওয়ার দ্বারা শরীয়তের উদ্দেশ্য এটিই[আহসানুল ফাতাওয়া-খন্ড-৪পৃষ্ঠা -২৮৩]


"কোন সম্পদে যাকাত আসে"
আল্লাহ তাআলার বড় অনুগ্রহ তিনি মানুষের যাবতীয় সম্পদে যাকাত ফরয করেননি।এমনটি করা হলে বান্দাহর জন্য যাকাত আদায়ের বিষয় টি বেশ জটিল ও কঠিন হয়ে যেত।যেসব সম্পদে যাকাত ফরয তা মূলত দুই প্রকার-এক.নগদ টাকা-পয়সা। তা কাগজে নোট হতে পারে। আবর তা ধাতব মুদ্রাও হতে পারে।দুই.সোনা-রোপা।এই দুই পদার্থ অলংকারের আকৃতিতে কিংবা মুদ্রার আকৃতিতে ও হতে পারে।কোনো কোনো  মানুষের ধারণা হলো,মহিলাদের অলংকারে যাকাত নেই।এমন ধারণা সঠিক নয়। সঠিক কথা হলো,সোনা-রোপার ব্যবহারিক অলংকারেও  যাকাত ওয়াজিব। তবে সোনা-রোপা ছাড়া ধাতব অন্য
কোনো অলংকারে তা প্লার্টিনিমের ন্যায় মূল্যবান ধাতুর তৈরী হলেও যাকাত ওয়াজিব নয়।এমনকি হীরা জহরতেও যাকাত ওয়াজিব নয়। তবে এগুলো ব্যবসার জন্য হলে অন্য কথা।[রাদ্দুল মুহতার পৃষ্ঠা -৩৫ খন্ড -২]


"যাকাতের ক্ষেত্রে বুদ্ধির দৌড় খাঁটানো অনুচিৎ"
একটি বিষয় গভীরভাবে অনুধাবন করা উচিত যে,যাকাত একটি ইবাদাত। আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দাহর ওপর এই ইবাদত ফরয হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে। অথচ বর্তমান যুগে যাকাতের ক্ষেত্রেও অনেককে দেখা যায় নিজের বুদ্ধির দৌড় খাঁটাতে।তাদের প্রশ্ন হলো,যাকাত কেন তাদের ওপর ওয়াজিব করা হল?অমুক জিনিসের ওপর যাকাত ওয়াজিব হয় না কেন?স্মরণ রাখতে হবে, যাকাত আদায় একটি ইবাদাত। আর ইবাদতের অর্থ হল, তা বুঝে আসুক বা নাই আসুক যেহেতু এটি আল্লাহর হুকুম ;অতএব তা মানতে হবে। দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যায়, কোনো ব্যক্তি প্রশ্ন উথাপন করে বসল, স্বর্ণ-রৌপ্যে ওয়াজিব অথচ হীরা, জহরতে ওয়াজিব নয় কেন?এই প্রশ্নটি একেবারেই এমন যে, কোনো ব্যক্তি বলল,সফর অবস্থায় যোহর, আছর এবং ইশার নামাজ কসর করতে হয়, চার রাকাআতের স্থলে দুই রাকাত আদায় করতে হয়,তাহলে মাগরিবের নামাজে কসর করতে দোষ কোথায়?অথবা কোনো ব্যক্তি একথা বলল,এক ব্যক্তি বিমানে প্রথম শ্রেণীতে সফর করে।এই সফরে তো আর তার কোনো ক্লান্তি নেই,তথাপি তার নামায অর্ধেক;অথচ আমি ঢাকা শহরে বাসে
চরে অত্যন্ত কষ্ট স্বীকার করে সফর করে থাকি,আমার নামাজ অর্ধেক নয় কেন?এইসব প্রশ্নের উত্তর একটিই,আর তা হল এটি আল্লাহ প্রদত্ত ইবাদত, আল্লাহ প্রদত্ত বিধান। ইবাদতে আল্লাহর বিধান মেনে চলা জরুরি। অন্যথায় তা আর ইবাদতই থাকবে না  এখানে বুদ্ধির পাগলা ঘোড়া দৌড়ানো নির্বুদ্ধিতা ছাড়া আর কিছু নয়।
ইবাদত করা আল্লাহর নির্দেশ। কোনো ব্যক্তি যদি এই প্রশ্ন উথাপন করে বসে যে, কেবলমাত্র ৯ জিলহজই হজ ফরয হওয়ার কারণ কি?আমার কাছে আজৎ গিয়ে হজ্জ করে আসা সহজ মনে হয়। আরাফাতের ময়দানে একদিনের পরিবর্তে আমি তিন দিন অবস্থান করব।এখন যদি ওই ব্যক্তি একদিনের পরিবর্তে তিন দিন পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে পড়ে থাকে, তাহলে কি তার হজ্জ আদায় হবে?কেননা আল্লাহ তাআলা ইবাদতের যে পন্থা -পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন,সে তা অনুসরণ করে নাই।অথবা কোনো ব্যক্তি এমনটি বলল,হজের তিনদিন রমিয়ে জিমারের(শয়তানের উদ্দেশ্যে পাথর নিক্ষেপ) সময় প্রচনু ভীর হয়ে থাকে,এই জন্য আমি চতুর্থদিন একসঙ্গে সবকয়টি পাথর নিক্ষেপ করব,তাহলে কি তার এই রমী সহীহ হবে?নিশ্চয় নয়। কেননা এ একটি ইবাদাত। আর ইবাদতের ক্ষেত্রে অপরিহার্য হলো,যে পন্থা - পদ্ধতি বলা হয়েছে, যে সময় এবং যেভাবে করতে বলা হয়েছে, ঠিক সেই পন্থা - পদ্ধতি অনুযায়ী,সেই সময়ে সেই ভাবেই তা আনজাম দিতে হবে।তবেই তা সহীহ  হবে,অন্যথায় নয়।সুতরাং এই প্রশ্ন উথাপন করা যে,স্বর্ণ-রৌপ্যে যাকাত কেন?আর হীরা-জহরতে কেন নয়?এমনটি বলার কোনো অবকাশ নেই।এটি ইবাদতের ফালসাফা-দর্শনের সম্পূর্ণ বিপরীত। সুতরাং আল্লাহ তাআলা স্বর্ণ-রৌপ্যে যাকাত ওয়াজিব করেছেন।এমনকি তা ব্যবহারের সামগ্রী হলেও। আবার নগদ টাকার ওপরও যাকাত ওয়াজিব করেছেন।

" ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্যমান নির্ধারণ পদ্ধতি "
ব্যবসায়িক পণ্যেও যাকাত আদায় করা ফরয।ব্যবসার উদ্দেশ্যে দোকানে ষ্টককৃত যাবতীয় পণ্যদ্রব্যের যাকাত আদায় করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে বাজার রেইট,খুচরা বিক্রয় মূল্য এবং পাইকারী দর এই তিন  পদ্বতির তৃতীয় পদ্ধতি অর্থাৎ পাইকারী দর-এর হিসাব অনুসরণ করে যাকাত আদায় করা যেতে পারে। তবে খুচরা বিক্রয়ের মূল্য হিসাবে যাকাত আদায় করায় অধিকতর সতর্কতা রয়েছে বলে আলেমদের অভিমত।[দুররুল মুখতারঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -২৪আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৯৯]

""ব্যবসার পন্যের সংজ্ঞা""
ব্যবসার উদ্দেশ্য যে দ্রব্যপণ্য ক্রয় করা হয়,তাকে-ই বলা হয় ব্যবসার পণ্য।সুতরাং ব্যবসার উদ্দেশ্য ফ্ল্যাট,জমি,বাড়ি-গাড়ি ইত্যাদি ক্রয় করলে তা ব্যবসার পণ্য হিসেবে সাব্যস্ত হবে।কোনে ব্যক্তি ব্যবসার নিয়তে এ জাতীয় কিছু ক্রয় করলে তাতে যাকাত ফরয হবে।অনেকেই কিন্তু ইনভেস্টমেন্টের উদ্দেশ্য ফ্ল্যাট ইত্যাদি ক্রয় করে থাকেন।শুরুতেই তার নিয়ত থাকে এর মাধ্যমে আমি মুনাফা অর্জন করব।এমনটি উদ্দেশ্য হলে এর যাকাত দিতে হবে। তবে নিজে থাকার উদ্দেশ্যে,ভাড়া দেয়ার উদ্দেশ্য অথবা সুযোগ হলে বিক্রয় করে দেব এমন উদ্দেশ্যে কিংবা সুনির্দিষ্ট কোনো উদ্দেশ্য ছাড়াই ফ্ল্যাট বা এ জাতীয় কোনোকিছু ক্রয় করা হলে(সুনির্দিষ্টভাবে ব্যবসার উদ্দেশ্য না থাকায়) তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে না।যাকাত কেবল সেইসব পণ্যে ওয়াজিব হবে ক্রয় করার সময় যা নিরেট ব্যবসার উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়ে থাকে। এমনকি নিজে থাকার জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করার পর তাতে ব্যবসার নিয়ত করে নিলেও যাকাত ওয়াজিব হবে না; বরং বিক্রয় করার পরই তা থেকে প্রাপ্ত মূল্যের ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। এতে একথাই বোঝা গেল যে,কোনো বস্তু ক্রয় করার সময় ব্যবসার নিয়ত থাকলে কেবলমাত্র সেগুলোই ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে গণ্য হবে এবং তার মূল্যের ওপর শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করা ওয়াজিব হবে।[দুররুল মুখতারঃ খন্ড-২,পৃষ্ঠা -৭,আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪,পৃষ্ঠা -২৯৫,ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা -১৪২]

"যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে কোন তারিখের মূল্যমান ধর্তব্য হবে"
যাকাতের মূল্যমান নির্ধারণের ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য অভিমত হলো এই যে, যেদিন হিসাব করে যাকাতের টাকা পৃথক করা হচ্ছে সেদিনকার বাজার দর।দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যেতে পারে একবছর পূর্বে একটি ফ্ল্যাট ক্রয় করা হয়েছিল একলাখ টাকায়।আজ সেই ফ্ল্যাটটির মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে তার বাজার দর দাড়িয়েছে দশলাখ টাকা। সুতরাং এক্ষেত্রে দশলাখ টাকা মূল্যমান স্তির করে যাকাতের অর্থ বের করতে।এক্ষেত্রে একলাখ টাকার হিসেবে যাকাত পরিশোধ করলে চলবে না।[দুরুরুল মুখতারঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -২৪]

"কোম্পানির শেয়ারে যাকাতের বিধান "
কোম্পানীর শেয়ারে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়িক পণ্যের বিধান প্রযোজ্য হলেও এর পদ্ধতি দু'টি।একটি পদ্ধতি হল নিরেট মুনাফা(Dividend)অর্জনের উদ্দেশ্যে কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করা। আর দ্বিতীয় পদ্ধতিটি হল ক্যাপিটাল গেইন করার উদ্দেশ্য শেয়ার ক্রয়করা। ক্যাপিটাল গেইন বলা হয়, এই নিয়তে কোম্পানীর শেয়ার ক্রয় করা যে,  যখনই শেয়ার বাজার চাঙ্গা হবে তখনই তা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করা হবে।এই দ্বিতীয় পদ্ধতির শেয়ারে বাজার দর অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে।
দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যেতে পারে, আপনি শেয়ার ক্রয় করলেন পঞ্চাশ টাকা হিসাবে।এর দ্বারা আপনার উদ্দেশ্য ছিল, এই শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি হলেই তা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জন করবেন। এরপর আপনি যেদিন যাকাতের হিসাব বের করবেন,সেদিন শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ষাট টাকা। এই অবস্থায় ষাট টাকার হিসাব ধরেই শেয়ারের মূল্যমান বের  করতে হবে।আর এর উপরই ভিত্তি করে শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করতে হবে। তবে যদি প্রথম পদ্ধতি অর্থাৎ আপনি কোম্পানি থেকে বার্ষিক মুনাফা লাভের উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করে থাকেন, এতে আপনার শেয়ার  বিক্রয় করার কোনো উদ্দেশ্য থাকে না,এমতাবস্তায় আপনাকে কোম্পানীর বর্তমান সমুদয় সম্পদের  অবস্থান যেনে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে হবে।দৃষ্টান্ত হিসেবে বলা যেতে, বর্তমানে
কোম্পানীর বিল্ডিং, মেশিনারিজ,কার
ইত্যাদি রয়েছে। এই বিষয়গুলো কোম্পানি থেকে জেনে নেয়া সম্ভব।
ধরা যাক কোনো কোম্পনীর শতকরা ৬০% নগদ ক্যাশ,ব্যবসায়ী আসবাপপত্র,কাঁচামাল এবং প্রস্তুতকৃত পণ্যের বিপরীতে আছে।আর শতকরা ৪০%বিল্ডং,মেশিনারিজ এবং কার ইত্যাদির আকৃতিতে আছে। এমতাবস্থায়  আপনাকে ওই শেয়ারগুলোর বাজার মুল্যানুসারে তার শতকরা ৬০%ভাগের বিপরীতে যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা অবশিষ্ট ৪০%টাকা যাকাতযোগ্য নয়।
যেমন শেয়ারে বাজার মূল্য ছিল ৬০ টাকা।আর কোম্পানির সম্পদের শতকরা ৬০%ভাগ ছিল যাকাতযোগ্য
৪০% ভাগ ছিল যাকাত অযোগ্য।এই অবস্তায় এই শেয়ারের পুরো মূল্য অর্থাৎ ৬০টাকার বিপরীতে ৩৬টাকায় যাকাত আদায় করতে হবে।
উপরের আলোচনায় একথা পরিষ্কার হয়ে গেল, বার্ষিক মুনাফা লাভের নিয়তে ক্রয়কৃত শেয়ারের ওই অংশেই যাকাত আদায় করতে হবে যার বিপরীতে সাধারণত যাকাত আদায় করতে হয়।তবে কোম্পানির সম্পদের এই হিসাব জানা বা বের করা সম্ভব না হলে সতর্কতামূলক পুরো শেয়ারের বাজার দর অনুযায়ী যাকাত আদায় করে দেয়া উত্তম।শেয়ার ছাড়া বহু,সার্টিফিকেট ইত্যাদি অর্থনৈতিক ফাংশনে নগদ টাকার যাকাত যে হারে আদায় করতে হয়,
এক্ষেত্রেও সেই পন্থাই অবলম্বন করতে হবে।[নিহায়াঃখন্ড-১পৃষ্ঠা-১৭২,ইমদাদুল ফাতাওয়াঃখন্ড-২ পৃষ্ঠা -২৩]

"শিল্পকারখানার সম্পদের বিধান"
শিল্পকারখানার প্রস্ততকৃত পন্য সামগ্রীর ওপর যাকাত ওয়াজিব।  এছাড়া প্রস্ততের বিভিন্ন স্তর ও পর্যায়ে থাকা কিংবা এখনো কাঁচামাল হিসেবে মওজুদ থাকা পন্যেও যাকাত ওয়াজিব। কিন্তু শিল্পকারখানা, মেশিনারিজ, বিল্ডিং, গাড়ি ইত্যাদির ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না। অংশীদারীত্বের ভিত্তিতে কোনো ব্যক্তি ব্যবসায় টাকা লগ্নি করলে ওই কারবারে তার মালিকানাধীন অংশে বাজার দর অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। মূলতঃ বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত যাবতীয় সম্পদ ব্যবসায়ী সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। হিসাব শেষে তার অংশ যা দাঁড়ায় বাজার দর অনুযায়ী এসব সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। সারকথা হল,নগদ টাকা যাতে ব্যাংক
ব্যালেন্স এবং ফাইন্যান্সিয়াল  ইন্সট্রুমেন্টস-ওঅন্তর্ভুক্ত;এসবে যাকাত ওয়াজিব। আর ব্যবসাসামগ্রী যাতে প্রস্তুতকৃত পন্য, কাঁচামাল এবং
এবং যেসব পন্যসামগ্রী প্রস্তুতের অপেক্ষায় রয়েছে, এজাতীয় যাবতীয় সম্পদ ব্যবসায়িক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। কোম্পানীর শেয়ারও ব্যবসায়িক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। এ ছাড়া  যেসব সম্পদ বিক্রয় করার  উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়েছে, তাও ব্যবসায়িক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত। যাকাত বের করার সময় সামগ্রিকভাবে এগুলো যাকাতের সম্পদে অন্তর্ভুক্ত করে নিতে হবে এবং এসবের যাকাত আদায় করতে হবে। [কিফায়াতুল মুফতীঃ খন্ড-৪,পৃষ্ঠা -২৫১]


"ঋণের যে টাকা প্রাপ্তি নিশ্চিত তার যাকাতের বিধান " 

মানুষের কাছে অনেক সময় ঋন হিসাবে টাকা দেয়া হয়ে থাকে, কখনো বা বাকীতে পন্য বিক্রয় করা হয়। অদূর ভবিষ্যতে তা পাওয়া যাবে এ বিষয়টি ও থাকে নিশ্চিত। এমতাবস্তায় যাকাতের অর্থ হিসাব করে বের করার সময় এগুলোকে ও হিসাবের অন্তর্ভুক্ত করে নেয়া উত্তম। যদিও শরীয়তের হুকুম হলো যে, অনাদায়ী ঋণের উপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কিন্তু এই সম্পদ হস্তগত হওয়ার পর বিগত বছরগুলোর যাকাত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে হিসাব করে আদায় করতে হবে। দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যেতে পারে, একব্যক্তি অপর এক ব্যক্তিকে
একলাখ টাকা ঋণ হিসেবে দিয়েছিল। পাঁচবছর অতিবাহিত হওয়ারপর প্রদত্ত ঋণের টাকা সে ফেরত পেল।যদি ও এই একলাক টাকার যাকাত বিগত পাঁচ বছর আদায় করা তার জন্য ওয়াজিব ছিল না, কিন্তু একলাখ টাকা উসূল হওয়ার পর এখন তাকে বিগত পাঁচ বছরের যাকাত আদায় করে দিতে হবে। যেহেতু একসঙ্গে কয়েক বছরের যাকাত আদায় করা কোনো কোনো সময় কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়, এজন্য প্রতি বছর হিসাব করে এসব সম্পদের যাকাত আদায় করে দেয়াই উত্তম।[ ফাতাওয়ায়ে শামীঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -৪,বাদায়িউস সানায়েঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -৬]

"যাকাতের হিসাব থেকে নিজের ঋণ বাদ দেওয়া।"
যাকাতের হিসাব করার সময় এবিষয়টিও লক্ষ রাখতে হবে যে, যাকাতদাতা নিজে ঋণগ্রস্ত কি না?যদি নিজে ঋণগ্রস্ত হয় তাহলে সামগ্রিক হিসাব থেকে ঋণ পরিমাণ টাকা বাদ দিতে হবে। ঋণের টাকা হিসাব থেকে বাদ দেয়ার পর যে অর্থ অবশিষ্ট থাকবে, তা-ই যাকাতের হিসাবের অন্তর্ভুক্ত হবে। এরপর শতকরা আড়াই টাকা হারে যাকাত আদায় করবে। উত্তম হল,সম্পদ হিসাবে যাকাতের যে পরিমাণ অর্থ দাঁড়ায়,তা পৃথক করে আলাদাভাবে সংরক্ষণ করে রাখবে।অতঃপর সময় ও সুযোগ মতো যাকাতের নির্দিষ্ট খাতে তা ব্যয় করতে থাকবে। এটিই হলো যকাতের হিসাব সংরক্ষণ করার উত্তম পদ্ধতি।

"ঋণ দুই প্রকার"
ঋণের ক্ষেত্রে লক্ষনীয় আরো একটি দিক রয়েছে।আর তা হল যে, ঋ দুই  প্রকার।
এক.সাধারণ ঋণ।যা মানুষ ব্যক্তিগত প্রয়োজনে কিংবা অস্বাভাবিক অবস্তায় নিতে বাধ্য হয়।
দুই.বিশাল বিশাল শিল্পকারখানা গড়ে তোলার কিংবা যে কোনো বড় ধরনের ব্যবসায়িক প্রকল্প খোলার উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেয়া হয়ে থাকে।দৃষ্টান্ত স্বরুপ -ফ্যাক্টরী স্থাপন,মেশিনারিজ আমদানি কিংবা
ব্যবসায়িক পণ্য ইমপোর্ট করার উদ্দেশ্যে যে ঋণ নেয়া হয়।
ধরা যাক একজন শিল্পপতির দু'টি  ফ্যাক্টরী চালু রয়েছে। কিন্তু সে ব্যাংক ঋণ নিয়ে তৃতীয় আরো একটি ফ্যাক্টরী চালু করল। দ্বিতীয় প্রকারের এই ঋণকে যদি সামগ্রীক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হয়, তাহলে এ জাতীয়  শিল্পপতিদের ওপর তো এক পয়সাও যাকাত ওয়াজিব হবে না; বরং উল্টো তারাই যাকাত প্রাপকের  তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।কেননা তাদের কাছে যাকাতযোগ্য যে পরিমাণ  সম্পদ রয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশী ঋণ সে ব্যাংক থেকে নিয়ে রেখেছে। দৃশ্যতঃ এখন তাকে দরিদ্র এবং মিসকীন মনে হচ্ছে। সুতরাং এ জাতীয় ঋণ বাদ দেয়ার ক্ষেত্রে শরীয়ত পার্থক্য নির্ণয় করে দিয়েছে।

"ব্যবসায়িক ঋণ কখন বাদ দেয়া হবে
ঋণের প্রথমোক্ত প্রকারটি তো সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে। বাদ দেয়ার পরই অবশিষ্ট সম্পদের যাকাত আদায় করতে হবে। ঋণের দ্বিতীয় প্রকারের ব্যাখ্যা হচ্ছে, যদি কোনো ব্যক্তি ব্যবসার উদ্দেশ্যে  ঋণ গ্রহণ করে থাকে অতঃপর তা এমন সামগ্রী ক্রয়ে বিনিয়োগ করে,যার ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়। যেমন ঋণের টাকায় কাঁচামাল ক্রয় করল কিংবা ব্যবসায়িক পণ্য ক্রয় করল,তাহলে কেবলমাত্র ঋণের এই পরিমান অর্থকে সামগ্রিক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া হবে। কিন্তু যদি ঋণের এই অর্থ যাকাত অযোগ্য সামগ্রী ক্রয়ে ব্যবহার করা হয়, তাহলে ঋণের এই অর্থকে সামগ্রীক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া যাবে না।

""" ঋণের দৃষ্টান্ত """
ধরা যাক, একব্যক্তি ব্যাংক থেকে এক কোটি টাকা ঋণ উত্তোলন করেছে। আন্তর্জাতিক বাজার (বর্হিঃবিশ্ব)থেকে এই টাকায় সে একটি প্লান্ট(মেশিনারি) ইম্পোর্ট (আমদানি) করল।যেহেতু ওই প্লান্টটি যাকাত যোগ্য সম্পদ নয়,সেহেতু এই অবস্থায় এই ঋণ সামগ্রিক  সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হবে না।কিন্তু যদি ঋণের এই অর্থে সে কাঁচামাল ক্রয় করে থাকে,তাহলে যেহেতু কাঁচামালের ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়,তাই এই ঋণ সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হবে। কেননা ঋণের হিসাবে অন্তর্ভুক্ত করে এটিকে সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ দেয়া হলেও কাঁচামাল তো সামগ্রিক সম্পদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে।
সারকথা হল,প্রয়োজনীয় ও অস্বাভাবিক ঋণের পুরোটাই সামগ্রিক সম্পদ থেকে বাদ যাবে।আর যে ঋণ কেবলমাত্র মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে নেয়া হয়েছে, সে ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা হলো যে, যদি ঋণের অর্থে যাকাত অযোগ্য সামগ্রী ক্রয় করা হয়, তাহলে ওই ঋণের অর্থ হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে না।আর যাকাতযোগ্য সামগ্রী ক্রয়ে অর্থলগ্নি করলে তা সামগ্রীক সম্পদের হিসাব থেকে বাদ দেয়া যাবে। এই ছিল যাকাত বের করার ক্ষেত্রে শরীয়তের আহকাম।

"প্রকৃত হকদারকে যাকাত দিতে হবে"
যাকাত আদায় করার ক্ষেত্রে শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান রয়েছে। মুফতী মুহাম্মদ শফী (রহ.) বলতেনঃ আল্লাহ তাআলা এই নির্দেশ দেন নাই যে,তোমরা যাকাতের অর্থ হিসাব করে বের কর।তিনি এ নির্দেশও দেন নাই যে,যাকাতের অর্থ ফিকে মার; বরং তিনি এ নির্দেশ দিয়েছেনঃواتوا الزكوة 'তোমরা যাকাত আদায় কর।অর্থাৎ প্রকৃত হকদার দেখে শরীয়ত নির্দেশিত পথে যাকাত আদায় করতে হবে। অনেকে সম্পদের যাকাত হিসাব করে বের করে থাকেন ঠিকই, কিন্তু তারা যাকাতের অর্থ প্রকৃত হকদারদের কাছে পৌঁছেছে কিনা তার প্রতি মোটেও ভ্রূক্ষেপ করেন না।
যাকাতের টাকা হিসাব করে আলাদা  করে কারো হাওয়ালা করেছেন,কিন্তু এটা তাহকীক করেন না যে,তা যথার্থ ক্ষেত্রে ব্যয় হচ্ছে কিনা?কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেনঃ যাকাত আদায় কর।অথচ আজকাল বহু প্রতিষ্ঠান-ই যাকাত উসুল করে নিয়ে যাচ্ছে,কিন্তু তারা যাকাতের অর্থ প্রকৃত হকদারদের মাঝে বন্টনের বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে পালন করছে না। তাই বিষয় টি যাকাত আদায়কারীর জন্য খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নেয়া উচিত। কেননা আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, যাকাত আদায় কর।

"যাকাতের হকদার কে?"
শরীয়তের সুস্পষ্ট নির্দেশ হল যে,যকাতের অর্থ কেবলমাত্র তাদেরকেই দেয়া হবে, যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়।প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র ছাড়া সারে ৫২তোলা রৌপ্য বা সমপরিমাণ সম্পদের মালিককে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে না।যাকাত ওই ব্যক্তি পাবে,যার কাছে সাড়ে ৫২ তোলা রৌপ্যের সমপরিমাণ নগদ অর্থ কিংবা এই পরিমাণ প্রয়োজনের অতিরিক্ত আসবাবপত্র না থাকে।

""হকদারকে মালিক বানিয়ে দেবে""
শরীয়তের নির্দেশ হল যে, যাকাতের অর্থ তার হকদারকে দিয়ে মালিক বানিয়ে দিতে হবে। অর্থাৎ এই সম্পদের ওপর প্রাপকের পূর্ণ মালিকানা প্রতিষ্ঠা হয় এবং সে যেন
স্বাধীনভাবে এ সম্পদ দিয়ে যা ইচ্ছা করতে পারে। একারণেই কোনো বিল্ডিং নির্মাণ কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা যায় না। কোনো সংস্থা বা সংগঠনের কর্মচারীদের বেতনাভাতা প্রদানেও যাকাতের অর্থ লাগানো যায় না।কারন হল যে,যাকাতের অর্থ নির্মাণ কাজ কিংবা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের বেতন-ভাতায় ব্যবহারের অনুমতি দেওয়া হলে টাউট বাটপাররাই যাকাতের সব অর্থ সাভার করে ফেলবে। কেননা এই উভয়বিধ কাজেই টাকা ব্যয় হয় প্রচুর। যা লাখের এমনকি কোটির কোটাও ছাড়িয়ে যায়। এই জন্য শরীয়তে নির্দেশ দেয়া হয়েছে, নিসাবের মালিক নয় এমন ব্যক্তিকে যাকাতের মালিক বানিয়ে দাও।কেননা যাকাতের একমাত্র হকদার হচ্ছে দরিদ্র অসহায় ও দুর্বল জনগোষ্ঠী। সুতরাং যাকাতের এই অর্থ তাদের হাতেই পৌঁছা জরুরি। যখন তাদের  মালিক বানিয়ে দেয়া হবে,তখনই যাকাত আদায় হবে।[রাদ্দুল মুহতারঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -৬৪,ফাতাওয়ায়ে দারুলউলুমঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা-১৯৫]

"কোন্ কোন্ আত্মীয় স্বজনকে যাকাত দেয়া যাবে"
যাকাত আদায় করার এই নির্দেশটি মানবগোষ্ঠীর অন্তরে একটি অন্বেষা ও অনুসন্ধিৎসা জন্ম দেয় যে,আমার কাছে যাকাতের এই পরিমান অর্থ রয়েছে, এই অর্থ যথাস্থানে ব্যয় করতে হবে। এ চিন্তা থেকেই সে এর প্রকৃত হকদারদের অনুসন্ধানে নেমে পড়ে। যারা এই অর্থ প্রাপ্তির হকদার তাদের একটি তালিকা ও সে চুরান্ত করে নেয়। এরপর সে ওই তালিকা মোতাবেক তাদের কাছে যাকাতের অর্থ পৌঁছানোর কাজে উদ্যোগী হয়।নিজ মহল্লা, পাড়া -প্রতিবেশী,যাদের সঙ্গে মেলামেশা রয়েছে,প্রিয়জন,আপনজন,আত্নীয় -স্বজন এবং বন্ধু -বান্ধবের মধ্যে যারা যাকাতের হকদার তাদের যাকাত প্রদান করাও যাকাতদাতার অন্যতম একটি দায়িত্ব।
এসবের মাঝে নিজের আত্মীয় -স্বজনকে যাকাত দেয়া সর্বোত্তম। নিজের আত্মীয়-স্বজন এবং নিকটজন কে যাকাত প্রদানের সওয়াব দ্বিগুন। যাকাত আদায়ের সওয়াব তো আছেই সেইসঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্ক অটুট রাখার জন্য রয়েছে অতিরিক্ত সওয়াব। সব  আত্নীয় -স্বজনকেই যাকাত দেয়া যেতে পারে। তবে আত্নীয়তার দু'টি সম্পর্ক এমন রয়েছে যাদেরকে যাকাত দেয়া জায়েজ নেই।একটি হল জন্মসূত্রের সম্পর্ক। সুতরাং পিতা সন্তানকে এবং সন্তান পিতাকে যাকাতের অর্থ দিতে পারবেনা। দ্বিতীয়টি হল বৈবাহিক সূত্রের সম্পর্ক। সুতরাং স্বামী স্ত্রী কে এবং স্ত্রী   স্বামী কে যাকাতের অর্থ দিতে পারবে না।এ ছাড়া অন্য সব আত্নীয় -স্বজনকেই যাকাতের অর্থ দেয়া যেতে পারে। ভাই -বোন,চাচা -চাচী, খালা-ফুফু এবং মামাকে যাকাতের অর্থ দেওয়া  উত্তম।তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই তারা যাকাতের হকদার কি না এবং তারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক কি না?তা পরখ করে নিতে হবে। [ফাতাওয়ায়ে শামীঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা-৬৯]

""বিধবা এতিমদের যাকাত দেয়ার বিধান""
অনেকে মনে করেন বিধবা হলেই তাকে যাকাত দিতে হবে।অথচ এক্ষেত্রেও শর্ত হল যে, বিধবাকে যাকাতের হকদার হতে হবে। তার সম্পদ নিসাব পরিমাণ থেকে কম হতে হবে। বিধবা যাকাতের হকদার হলে তাকে সাহায্য করা তো,সৌভাগ্যের কথা। কিন্ত হকদার না হলেও শুধু বিধবার অজুহাতে সে যাকাতের হকদার সাব্যস্ত হতে পারে না।এতিমের ক্ষেত্রে ও এই একই কথা  প্রযোজ্য।কারণ এতিম কে সাহায্য করার চেয়ে পূণ্যময় আর কোনে কাজ হতে পারে না,কিন্তু নিসাবের মালিক হলে এতিমকেও যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েজ হবে না। যাকাত আদায়ের সময় উল্লিখিত বিষয়গুলো দৃষ্টিসীমায় রাখা জরুরি একটি বিষয়। [রাদ্দুল মুহতারঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -৭০,#ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুমঃ খন্ড-৬,পৃষ্ঠা-২৮২]

""ব্যাংক কর্তৃক যাকাত কর্তনের হুকুম। ""
সম্প্রতি কোনো কোনো  অনৈসলামিক মুসলিম  রাষ্ট্রে৷ সরকারী তত্ত্বাবধানে যাকাত আদায় করার প্রচলন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বহু অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার যাকাতের টাকা উসূল করে নিচ্ছে। সরকারী সার্কুলার অনুযায়ী অর্থনৈতিক এসব প্রতিষ্ঠান যাকাতের অর্থ কর্তন করে সরকারের হাতে তুলে দিচ্ছে। এবিষয়ে শরীয়তের বিধান হল ব্যাংক বা অন্য যেকোনো অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক অর্থ কর্তনের ফলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।এই অর্থের দ্বিতীয়বার যাকাত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।অবশ্য সতর্কতা হিসেবে অর্থ কর্তনের সময় আসার পূর্বেই মালিক নিয়ত করে নেবে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান যে অর্থ যাকাতের নামে কর্তন করতে যাচ্ছে, তা আমি নিজেই আদায় করছি।এমনটি করলে নিঃসন্দেহে তার যাকাত আদায় হয়ে যাবে,পুনরায় এর যাকাত দিতে হবে না। ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান কর্তৃক যাকাত কর্তন করে নেয়ার ক্ষেত্রে কেউ কেউ এই সংশয় ব্যক্ত করে থাকেন যে,এসব প্রতিষ্ঠানে গাচ্ছিত সমুদয় অর্থে তো এখনো বছরই পূর্ণ হয় নাই। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান পুরো অর্থেরই যাকাত কর্তন করে নিচ্ছে। এ সম্পর্কে ইতিপূর্বেই বলা হয়েছে যে,প্রতিটি অর্থের বিপরীতে বছর পূর্ণ হওয়াটা জরুরী নয়; বরং যদি কোনো ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের অধিকারী হয়, তাহলে এমতাবস্থায় বছর পূর্তির এক দিন পূর্বেও যে অর্থ হস্তগত হবে এবং তার বিপরীতে  যাকাতের যে অর্থ কর্তিত হবে, তা শরয়ী দৃষ্টিকোন থেকে সম্পূর্ণ সহীহ হিসেবে গণ্য হবে।কেননা শরীয়ত এই অর্থেও যাকাত আরোপ করেছে।

""একাউন্টের টাকা থেকে ঋণের হিসাব বাদ দেয়ার প্রদ্বতি""
কোনো ব্যক্তির যাবতীয় সম্পদ যদি ব্যাংকে গচ্ছিত থাকে।তার কাছে আর কোনো সম্পদই অবশিষ্ট না থাকে। অপরপক্ষে অন্য মানুষ তার কাছে ঋণের টাকা প্রাপ্য হয়।এই অবস্থায় তো নির্দিষ্ট তারিখে ব্যাংক তার যাকাতের অর্থ কেটে নেয়। অথচ তার টাকার হিসাব থেকে ঋণের টাকা বাদ দেয়া হয় না। যে কারণে  যাকাতের অর্থ পরিমানের চেয়ে বেশি কর্তিত হয়।
এর সমাধান এমন হতে পারে যে, ওই ব্যক্তি যাকাত কর্তনের নির্দিষ্ট তারিখ  আসার পূর্বেই ব্যাংক থেকে নিজের টাকা উত্তোলন করে নেবে।কিংবা কারেন্ট একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করে নেবে; বরং প্রত্যেক ব্যক্তির শুরু থেকেই কারেন্ট একাউন্টেই টাকা জমা করাই উচিত। সেভিং একাউন্টে টাকা জমা করবে না। কেননা সেভিং একাউন্ট হল সুদি একাউন্ট।আর কারেন্ট একাউন্টে যাকাত কর্তন করা হয় না। মোটকথা নির্দিষ্ট তারিখ আসার পূর্বেই টাকা কারেন্ট একাউন্টে ট্রান্সফার করে নেবে। আর কারেন্ট একাউন্টে যেহেতু যাকাত কর্তন করা হবে না। তাই নিজে হিসাব করে যাকাতের অর্থ আদায় করবে।এই সমস্যার দ্বিতীয় একটি সমাধান  এমনও হতে পারে যে, এই ব্যক্তি পূর্ব থেকেই ব্যাংকে একটি দরখাস্ত করে রাখবে যে, আমি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নই।সুতরাং আমার ওপর যাকাত ও ওয়াজিব নয়। যদি এমনটি করে তাহলে বিধি মোতাবেক তার যাকাত কর্তন করা হবে না।

"" কোম্পানী কর্তৃক শেয়ারের যাকাত কর্তন ""
কোম্পানী শেয়ারের ক্ষেত্রে একটি মাসআলা হল,কোনো কোনো কোম্পানী বার্ষিক লভ্যাংশ ঘোষণার সময় যাকাতের অর্থ কেটে রেখে দেয়।কিন্তু এক্ষেত্রে সমস্যা হলো, কোম্পানী শেয়ার থেকে যাকাতের যে  অর্থ কর্তন করে,তা শেয়ারের (Face Value)ফেইস ভ্যালুর,ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করে থাকে।অথচ  শরীয়তের বিধান মোতাবেক মার্কেট ভ্যালুর ওপর যাকাত ওয়াজিব হয়ে থাকে। সুতরাং ফেইস ভ্যালুর ওপর কর্তিত যাকাতের  অর্থ আদায় হয়ে গেলে ও মার্কেট ভ্যালুর সঙ্গে  যে পার্থক্য দাঁরায় তা সামঞ্ঝস্য করে আদায় করে নিতে হবে।
দৃষ্টান্ত স্বরুপ,একটি শেয়ারের ফেইস ভ্যালু ছিল ৫০ টাকা।অথচ তার মার্কেট ভ্যালু হচ্ছে ৬০ টাকা। কোম্পানী কর্তৃপক্ষ  এই শেয়ারের ফেইস ভ্যালু অর্থাৎ ৫০টাকার হিসাবে যাকাত আদায় করে দিল।এক্ষেত্রে আরো ১০টাকার যাকাত মালিক কে নিজের পক্ষ  থেকে আদায় করতে হবে। কোম্পানীর শেয়ার এবং এন. আই.টি ইউনিট এই উভয় প্রকারেই যাকাতের বিধান  উল্লিখিত পদ্ধতিতে কর্তন করা হবে। সুতরাং যেখানেই ফেইস ভ্যালুর হিসাবে যাকাত আদায় করে দেয়া হবে,সেখানে মার্কেট ভ্যালুর সঙ্গে পার্থক্য নির্ণয় পূর্বক অতিরিক্ত টাকার যাকাত নিজের পক্ষ থেকে আদায় করে দেয়া জরুরী।


"" যাকাত আদায়ের তারিখ নির্ধারন পদ্ধতি ""
যাকাত আদায়ের জন্য শরীয়ত কোনো তারিখ বা সময় নির্দিষ্ট করে দেয় নাই; বরং প্রত্যেক ব্যক্তির যাকাত আদায়ের জন্য স্বতন্র তারিখ হতে পারে। এক্ষেত্রে মূলত ; শরীয়তের বিধান হল,যেদিন ও তারিখে যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হল,সেইদিন ও তারিখ অনুযায়ী তার সম্পদের যাকাত হিসাব করে বের করতে হবে।
দৃষ্টান্ত স্বরুপ, মুহররম মাসের   ১ তারিখ প্রথম দফায় নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার যাকাত পরিশোধের তারিখ হবে পয়লা মুহররম।এখন প্রতি বছর পয়লা মুহররম তাকে যাকাত আদায় করতে হবে। তবে অনেক সময় এমনটি হয়ে থাকে যে,এই তারিখটি মানুষের স্বরণ থাকে না।এজন্য অপারগতা অপসারণে এমন  একটি তারিখ নির্দিষ্ট করে নেয়া জরুরি,যাতে করে বিষয় তার জন্য সহজ হয়ে যায়।পরবর্তী বছরসমূহে এই তারিখ অনুসরণে যাকাত আদায় করতে থাকবে।তবে প্রথম দফার হিসাবের সময় একটু অতিরিক্ত আদায় করে নিলে পূর্ণ সন্দেহমুক্ত হওয়া যাবে।
[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড -৬,পৃষ্ঠা -৭১]


"" যাকাত আদায়ের জন্য রমযান মাসকে তারিখ হিসাবে নির্ধারণ করা"

সাধারণত মানুষ রমযান মাসে যাকাতের অর্থ পৃথক করে থাকে।এর কারন হল যে,হাদীস শরীফের বর্ণনানুযায়ী এ মাসে এক ফরযে সত্তর ফরয আাদায়ের সাওয়াবের  কথা উল্লেখ রয়েছে। আার যাকাত  যেহেতু একটি ফরজ ইবাদত, রমযান মাসে এ ফরয টি আদায় করতে পারলে সহজে ৭০ ফরযের সাওয়াব অর্জিত হয়ে যাবে।কথা এ পর্যন্ত পুরোপুরি ঠিক ও যথার্থ। কিন্তু কারো যদি নিজের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়ার সময়টা জানা থাকে তবে শুধু এই সাওয়াবের আশায় রমযানে যাকাত আদায়ের তারিখ নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয় নয়। অবশ্য এক্ষেত্রে অন্য একটি পদ্ধতিও অনুসরণ করে রমযানের ফযিলত  অর্জন সম্ভব হতে পারে। তা হলো এই যে,যাকাত অল্প অল্প করে আদায় করতে থাকাবে।রমযান মাসে হিসাব -নিকাশ করে যাকাতের অবশিষ্ট  সমুদয় অর্থ আদায় করে দেবে।নিসাবের মালিক হওয়ার তারিখ স্বরণ না থাকলে রমযান মাসে আদায় করা উত্তম হবে।[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড -৬,পৃষ্ঠা -১১]
অবশ্য এক্ষেত্রে সতর্কতামূলক বেশী আদায় করে দেয়া উচিত। কারণ তারিখ আগ-পিছ হওয়ার কারণে হিসাবে যৎসামান্য কমবেশ হওয়ার যে আশংকা রয়েছে, তাও পূরণ হয়ে যাবে।যখন একবার তারিখ নির্দিষ্ট করে নেওয়া হবে, তারপর প্রতি বছর ওই একই তারিখে সম্পদের হিসাব করে নেবে এবং দেখবে এসময় তার কাছে কী কী সম্পদ রয়েছে। নগদ টাকা তার হাতে কত আছে। স্বর্ণ থাকলে ওই তারিখের স্বর্ণের বাজার দর যাঁচাই করে নেবে।শেয়ার থাকলে মার্কেটে শেয়ারের ভ্যালু কী তা জেনে নেবে।স্টক সম্পদের মূল্যমান নির্ধারণের প্রয়োজন হলে ওই তারিখের বাজার দর অনুযায়ী স্টক মালের মূল্যমান নির্ধারণ করে নেবে। অতঃপর প্রতি বছর ওই একই তারিখে হিসাব করে যাকাত আদায় করে দেয়া উচিত। ওই তারিখের আগ-পিছ করা অনুচিত। একবার তারিখ নির্ধারিত হয়ে গেলে প্রতি বছর সেই নির্ধারিত তারিখে নিজের সমুদয় সম্পদের হিসাব টেনে যাকাত আদায় করতে হবে। পরবর্তী এই তারিখ আগ-পিছ করা ঠিক হবে না।
[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা -৭৫,মিশকাত শরীফঃপৃষ্ঠা-১৭৫]
মোটকথা যাকাত সম্পর্কে এই সংক্ষেপ বিবরণ সবার সামনে তুলে ধরা হল।আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে শরীয়তের এসব বিধানগুলোর ওপর যথাযথভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন।আমীন!
واخر دعوانا أن الحمد لله ربالعا لمين.
         

                 "প্রশ্নোত্তর পর্ব"
ভাষণের পর পর উপস্তিত শ্রোতা দর্শকমন্ডলীর পক্ষ থেকে লিখিত আকারে বেশকিছু প্রশ্ন উথাপিত হয়। জাস্টিস আল্লামা মুফতী তাকী উসমানী (দা.বা.) এসব প্রশ্নের তাৎক্ষণিক যে জবাব দেন,পাঠক সমাজের সামনে প্রশ্নোত্তর আকারেই  তা তুলে ধরা হলো।[প্রকাশ থাকে যে, জবাব শেষে বিভিন্ন কিতাবের যেসব রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, তা
অনুবাদক কর্তৃক সংযোজিত।

"যাকাত আদায়ে চাঁদের তারিখ   নির্দিষ্ট করা জরুরি।"
প্রশ্নঃযাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে চান্দ্র মাসের তারিখ না খ্রিস্ট্রীয় মাসের তারিখ অনুসরণ করা যাবে?
উত্তরঃএ বিষয়ে শরীয়তের  সিদ্ধান্ত হল যে, চান্দ্র মাসের তারিখ অনুযায়ীই যাকাত আদায় করা জরুরি। খ্রিষ্ট্রীয় বা অন্য কোনো মাসের হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করা জায়েজ নেই।

"অলংকারের যাকাত আদায় কার দায়িত্"
প্রশ্নঃঅনেক মহিলাই স্বামীকে তার অলংকারের যাকাত আদায় করার কথা বলে থাকেন।কেননা যাকাত আদায়ের মতো টাকাকড়ি তো আর তাদের কাছে  নেই।প্রশ্ন হল যে, স্বামী স্ত্রীর অলংকারের যাকাত আদায় করে দিলে কি তা আদায় হবে?
উত্তরঃ এমতাবস্থায় স্বামীর করনীয় নির্ধারণের পূর্বে একটি বিষয় আমাদেরকে ভালভাবে বুঝতে হবে যে,যে ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক, শরীয়ত তারই ওপর যাকাত ফরয করেছে। একজন মুসলমান যেমনিভাবে নিজের নামা জের দায়িত্বশীল নিজেই,অন্য কেউ নয়,ঠিক তেমনিভাবে যাকাতের দায়িত্বশীল ওই ব্যক্তিই হবে,যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়েছে।
স্বামীর দায়িত্বে যেমনিভাবে স্ত্রীর নামাজ  বর্তায় না, তেমনিভাবে স্ত্রীর যাকাত ও কখনো স্বামীর ওপর বর্তাবে না। স্ত্রী নিসাবের মালিক হলে
যাকাত তাকেই আদায় করতে হবে। স্ত্রীর এমনটি দাবী করাও যথার্থ নয় যে, আমি টাকাকড়ির মালিক নই।টাকাকড়ির মালিক যদি সে নাই হত তাহলে কোন্ কারণে তার ওপর যাকাত ফরয হতে যাবে?টাকাকড়ি না থাকলে অলংকার বিক্রয় করে যাকাত আদায় করতে তার অসুবিধাটা কোথায়? অবশ্য স্বামী স্বেচ্ছায় সানন্দে তার অলংকারের যাকাত আদায় করে দিলে ভিন্নকথা।
এক্ষেত্রেও স্ত্রীর অনুমতি থাকা জরুরি। তবে অলংকার স্বামীর মালিকাধীন হলে যাকাত স্বামীকেই আদায় করতে হবে স্ত্রীকে নয়।[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা -৬৫,কিফায়াতুল মুফতীঃখন্ড-৪,পৃষ্ঠা -২৫০]

""যাকাতের অর্থ গরীবকে মালিক বানিয়ে দেয়া জরুরি ""
প্রশ্নঃকোনো কোনো বিত্তবান সম্পদশালী এলাকায় অসংখ্য গরীব মানুষ থাকা সত্তেও নিজে ঝামেলামুক্ত থাকার লক্ষ্যে স্থানীয়  কোনো সংগঠনের দায়িত্বে যাকাতের অর্থ বিলিবন্টন করার জন্য দিয়ে দেন।যাকাতের অর্থ পেয়ে সংগঠনের কর্তা ব্যক্তিরা ওই অর্থ হিলা-বাহনার মাধ্যমে নিজেদের ইচ্ছা মোতাবেক কবরস্থান,বিবাহশাদী ইত্যাদি  কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে থাকেন।  এতে করে প্রকৃত গরীবরা যাকাতের অর্থ থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। এভাবে যাকাত আদায় করা কি দুরস্ত হবে?
উত্তরঃ শরীয়ত এভাবে যাকাত আদায় সমর্থন করে না।যাকাতের গর্থ নিসাবের মালিক নয় এমন কোনো দরিদ্র ব্যক্তিকে মালিক বানিয়ে দেয়া জরুরি। হকদারদের মালিকানা প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে কবরস্থান, মসজিদ নির্মাণ কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েজ নাই। আমাদের সমাজে (تمليك)'তামলীক'_এর নামে হিলা বাহনার আশ্রয় নিয়ে কোনো গরীবকে প্রথমে যাকাতের টাকা দিয়ে  বলা হয় যে, তুমি এই টাকা অমুক কাজে ব্যয় করে দাও। দরিদ্র লোকটিও বুঝতে পারে, হিলা- বাহনার মাধ্যমে তার সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। যাকাতের একটি পয়সাও ব্যক্তিগত কাজে লাগানোর কোনো সুযোগ তার নেই।এটি একেবারেই একটি নিরেট হিলা-বাহনা।এমনটি করার দ্বারা হুকুমে কোনো রদবদল হবে না। [আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪,পৃষ্ঠা -২৮২,ফাতাওয়ায়ে রহীমীয়াঃখন্ডঃ৭,পৃষ্ঠা-৩৬৮]

"'"প্রচণার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা """
প্রশ্নঃ যাকাতের অর্থ বা অন্য যেকোনো অনুদানের অর্থ সংগ্রহের জন্য আজকাল বিভিন্ন সংগঠন বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালিয়ে থাকে।আর এজন্য খরচ করা হয় যাকাতের সংগৃহিত অর্থ। এ জাতীয় প্রচরণার কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা কি জায়েয হবে?
উত্তরঃ এমনটি করা শরীয়তের দৃষ্টিতে  জায়েয নয়। [ফাতাওয়ায়ে মাহমুদীয়াঃখন্ড-৩,পৃষ্ঠা -৬১]

+(মাদ্রাসার ছাত্রদের যাকাতের অর্থ দেয়া)+
প্রশ্নঃ যাকাতের সর্বোত্তম খাত তো মিসকীন এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীই।আামাদের দেশে ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংস্থার  কারনে যাকাতের এ খাতটি বলতে গেলে একেবারে লোপ পেতে বসেছে। ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা যাকাতের অর্থ ওঠিয়ে নিয়ে যান।এরপর তারা যাকাতের এই অর্থ تمليكএর মাধ্যমে মাদ্রাসা ও  মসজিদ
নির্মাণেও ব্যয় করে থাকেন। দরিদ্র জনগোষ্ঠী যারা বছর যাকাতের আশায় ছেলে মেয়েদের বিয়ে-শাদীসহ অন্যান্য কাজ স্থগিত করে অপেক্ষায় ছিল,এই দরিদ্র বেচারারা তাহলে কি করবে?
উত্তরঃ যেসব প্রতিষ্ঠানে সঠিক তরীকায় শরীয়ত নির্দেশিত হকদারদের মাঝে যাকাতের ব্যয় করার কোনো ব্যবস্থাপনা নেই,এজাতীয় কোনো প্রতিষ্ঠানে যাকাত দেয়া অনুচিত। বরং প্রকৃত দরিদ্র হকদারদেরকে যাকাতের টাকার মালিক বানিয়ে দেয়া জরুরী।অবশ্য কোনো মাদ্রাসা বা দ্বীনী প্রতিষ্ঠানে প্রকৃত গরীব হকদারদের মাঝে যাকাতের অর্থ ব্যয় বন্টনের সুব্যবস্থা থাকলে সেখানে  যাকাতের অর্থ দেয়া উচিত। কেননা সাধারন দরিদ্ররা যাকাতের হকদার হতে পারলে মাদ্রাসার গরীব ছাত্ররা তার হকদার হওয়ার জন্য  আরো বেশী যোগ্য।এর দ্বারা দ্বীনি ইলম টিকে থাকার ক্ষেত্রে সহায়তা হবে। সুতরাং এসব দ্বীনি প্রতিষ্ঠান ও মাদ্রাসায় নির্ধিদ্বায় যাকাতের অর্থ দেয়া যেতে পারে। তবে যাকাত আদায়ে নিজের আত্নীয়-স্বজন, পাড়া - প্রতিবেশীকে  অগ্রাধিকার দেয়া জরুরি। [ফাতা ওয়ায়ে রহীমীয়াঃ খন্ড-৮, পৃষ্ঠা-২৩০ ]

""যাকাত আদায়ের নির্দিষ্ট তারিখে নিসাবের কম সম্পদ হলে""
প্রশ্নঃযদি কারো যাকাত আদায়ের
তারিখ নির্দিষ্ট থাকে।বছরান্তে ওই তারিখ আসার পর দেখা গেল,তার সম্পদ নিসাব পরিমাণ নেই।ওই অবস্থায় কি ওই ব্যক্তিকে যাকাত আদায় করতে হবে?
প্রশ্নঃকোনো ব্যক্তির যাকাত আদায়ের তারিখ যদি নির্দিষ্ট থাকে।আর বছর অতিবাহিত হয়ে নির্দিষ্ট তারিখের দিন দেখা গেল যে,তার নিসাব পরিমাণ সম্পদ নেই।এক্ষেত্রে শরীয়তের দিকনির্দেশনা হল যে, নির্দিষ্ট তারিখে নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকলে ওই ব্যক্তির ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে না।


"" প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হওয়ার অর্থ ""
প্রশ্নঃপ্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়া' শরীয়তের একথার ব্যাখ্যা ও সংঙ্ঘা কি?কেননা প্রয়োজনের বিষয় টি তো সবার ক্ষেত্রে একইভাবে প্রযোজ্য নয়।মানুষ ভেদে প্রয়োজন ও ভিন্ন হয়ে থাকে।
উত্তরঃপ্রয়োজনের অতিরিক্ত হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হল যে,পানাহারের বস্তু, ব্যবহারের জিনিসপত্র,কাপর-চোপর,এবং বাড়ি-ঘরের কাজে ব্যবহার্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের বাইরে যেসব সম্পদ থাকবে সেগুলোই প্রয়োজনের অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচ্য হবে।তবে এক্ষেত্রে একটু ব্যাখ্যা হল এই যে,প্রত্যেক মানুষের প্রয়োজন একরকম নয়।কারো বারিতে মেহমানের লাইন পড়ে যায়। তাই মেহমানের বিছানা-পত্রসহ  আরো বেশকিছু জিনিস তার সার্বক্ষণিক পয়োজন থাকে।সুতরাং এগুলোও তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে টেলিভিশন আদৌ মানুষের প্রয়োজনে  পড়ে না। তাই এটি প্রয়োজনীয় সামগ্রীর অন্তর্ভুক্ত হবে না। [রাদ্দুল মুহতারঃ খন্ড-২,পৃষ্ঠা-৭০-৭১, জাদিদ ফেকহী মাসায়েলঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা ৫৯]

""টেলিভিশন প্রয়োজনের অতিরিক্ত" প্রশ্নঃটেলিভিশন কি নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী থেকে অতিরিক্ত?
উত্তরঃঅনেকেই মনে করে থাকেন যে,টেলিভিশন মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অন্তর্ভুক্ত।কিন্তু তাদের এই ধারণা সঠিক নয়;বরং নিঃসন্দেহে টেলিভিশন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অতিরিক্ত।

"" নির্মান কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয়ের হুকুম""
প্রশ্নঃ হাসপাতাল বা মাদ্রাসার বিল্ডিং নির্মাণ কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করতে চাইলে তার পদ্বতি কি হবে?
উত্তরঃহাসপাতাল,মসজিদ, মাদ্রাসা, ইত্যাদি জনকল্যাণমুলক ও ধর্মীয় কাজে যাকাতের অর্থ দ্বারা বিল্ডিং ইত্যাদি নির্মাণে  শরীয়তের সুস্পষ্ট বিধান হল এই যে,এ জাতীয় কাজে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয নেই।হিলার মাধ্যমে সমাজে এজাতীয় কাজ করার যে প্রচলন রয়েছে, শরীয়তের দৃষ্টিতে তা সঠিক নয়।কেননা এক্ষেত্রে উভয়ের-ই জানা থাকে যে,এটি মূলতঃتمليك 'তামলীক' বা মালিকানা সত্ত বুঝিয়ে দেয়া নয়। এজাতীয় হিলা কোনোক্রমেই গ্রহনযোগ্য নয়।তবে এমনটি করা যেতে পারে যে,যাদের জন্য এই নির্মাণ করা হচ্ছে, প্রকৃত অর্থে তাদের কাউকে মালিকানা সত্ত বুঝিয়ে দেয়া। এরপর যেহেতু তার জানা আছে যে, এই অর্থ আমাদের জন্যই এবং আমাদের ব্যয়ের খাতেই ব্যবহার হবে, একারনে সে যদি স্বেচ্ছায় খুশি মনে নির্মাণ কাজে ব্যয় করার জন্য এই টাকা দিয়ে দেয় তাহলে এমনটি করার সুযোগ রয়েছে।

"" যাকাতের টাকায় খানা খাওয়ানো"
প্রশ্নঃযাকাতের টাকায় খাবার রান্নাবান্না করে প্রকৃত অসহায় দরিদ্রদের আহার করিয়ে দিলে কি যাকাত আদায় হবে?
উত্তরঃ যাকাতের টাকায় খানা রান্নাবান্না করে প্রকৃত হকদার দরিদ্রদের আহার করিয়ে দেয়া হলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড- ৬ পৃষ্ঠা-২০৫,আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪পৃষ্ঠা-২৮২] 

""যাকাতের টাকায় কিতাব ক্রয় করে দেয়া""
প্রশ্নঃকিতাব প্রকাশের ক্ষেত্রে যাকাতের টাকা ব্যয় করা কি জায়েয হবে?
উত্তরঃকিতাব প্রকাশের ক্ষেত্রে যাকাতের অর্থ ব্যয় করা জায়েয নেই।অবশ্য যাকাত হিসেবে গরীবদের কিতাবগুলোর মালিক বানিয়ে দেয়া হলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।
[ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা- ২০৫,আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৮২]

""ব্যবসায়িক পণ্যের মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি ""
প্রশ্নঃএমন ব্যবসায়িক পন্য যার বাজার দর জানা নেই।বাজারেও এজাতীয় পন্য ব্যাপকহারে বেচা কেনা হয়।এই পন্যটি যার কাছে আছে সে এখনো তা বিক্রয় করে নাই এবং অচিরেই বিক্রয় করার কোনো সম্ভাবনাও নেই। এজাতীয় পন্যে যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ পদ্ধতি কি হবে?
উত্তরঃএজাতীয় ব্যবসায়িক পন্যে অভিজ্ঞতার আলোকে যাকাত নির্ধারণ করতে হবে। খুবই ন্যায় নিষ্ঠা এবং ইনসাফের সঙ্গে এর একটি আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে নেবে।এভাবে ইনসাফের সঙ্গে আনুমানিক মূল্য নির্ধারণ করে সেই হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে।

"" ব্যবসার জন্য ক্রয়কৃত পন্যসামগ্রিই যাকাত হিসেবে দেয়ার বিধান ""
প্রশ্নঃকারো কাছে ব্যবসার এমন একটি পন্য রয়েছে,যা বিক্রয় হচ্ছে না।এক্ষেত্রে কিওই পন্যটিই গরীবদেরকে যাকাত হিসেবে দেয়া যাবে,না নগদ টাকা দিতে হবে?
উত্তরঃওই পন্যটিই সরাসরি যাকাত হিসেবে গরীবদের মাঝে বিলিবন্টন করে দেয়া জায়েয হবে।নগদ টাকা দিতে হবে এমনটি জরুরি নয়। তবে ব্যবসার পন্যটি সাধারণ ভাবে ব্যবহার না হলে এবং গরীবদের এর দ্বারা কোনো উপকারে না আসলে ন্যায়নীতির সাথে এর মূল্যস্থির করে নগদ টাকা যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে।[ফাতাওয়ায়ে রহীমিয়াঃ খন্ডঃ৯,পৃষ্ঠা -১০৭]

"ইমপোর্টকৃত পন্যে যাকাতের বিধান"
প্রশ্নঃব্যবসার উদ্দেশ্যে পন্য ক্রয় করা হয়েছে বর্হিঃবিশ্ব থেকে।কিন্তু তা এখনো ক্রেতার নিয়ন্ত্রণে আসেনি।এই পন্যের যাকাত কোন্ হিসাবের ভিত্তিতে দেয়া হবে?
উত্তরঃশরীয়তের বিধান হল যে, পন্যটি যদি ক্রেতার মালিকানায় এসে গিয়ে থাকে কিন্তু তা যদি এখনো তার হস্তগত না হয়,এক্ষেত্রে পন্যটির মূল্য নির্ধারণ করে নিতে হবে।পন্যটিতে যদি ক্রেতার মালিকানাই প্রতিষ্ঠিত না হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে যতো টাকায় পন্যটি ক্রয় করা হয়েছে,কেবলমাত্র ওই পরিমাণ টাকার যাকাত ওয়াজিব হবে। দৃষ্টান্ত হিসাবে বলা যেতে পারে,  কোনো ব্যক্তি একটি পন্য ইমপোর্ট করল।ওই পণ্যটি তার মালিকানাতেও এসে গেছে বটে, কিন্তু তা এখনো চালানরত অবস্থায় রয়েছে। পন্যটি এখনো তার হস্থগত হয়নি।এমনটি হলে পণ্যটির মূল্য নির্ধারণ করে যাকাত আদায় করে দিতে হবে।কিন্তু পণ্যটিতে যদি  এখনো ওই ব্যক্তির মালিকানাই প্রতিষ্ঠিত না হয়ে থাকে,তাহলে বুঝতে হবে ওই ক্রয় চুক্তিটি এখনো সম্পন্ন-ই হয় নাই। তাহলে এক্ষেত্রে পন্যটি ক্রয়ে  যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়েছে ওই পরিমাণ অর্থের ওপরই যাকাত ওয়াজিব হবে। ক্রয়কৃত ওই পন্যটিতে কোনো যাকাত ওয়াজিব হবে না।

"খ্রিস্ট্রীয় তারিখ থেকে চন্দ্র তারিখে প্রত্যাবর্তন পদ্ধতি"
প্রশ্নঃ প্রথম থেকেই কোনো ব্যক্তি ঈসায়ী তারিখ অনুযায়ী যাকাত আদায় করে আসছিল।এখন ওই ব্যক্তি যদি চন্দ্র তারিখ অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে চায়,তাহলে তাকে কি প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে?
উত্তরঃবিগত বছরগুলোতে চন্দ্র মাসের অল্প-সামান্য যে পার্থক্য-ব্যবধান ছিল,তার হিসাব বের করে যাকাত আদায় করে দিতে হবে। প্রতি বছর ২.৬০ এর হিসাবে অতিরিক্ত যাকাত আদায় করে দিয়ে চন্দ্র মাসের হিসাবের দিকে প্রত্যাবর্তন করা জায়েয হবে।

""খাটি সোনার ওপর যাকাত""
প্রশ্নঃসোনার অলংকারের খাঁদ এবং নাগিনার মূল্য ও ওজন সোনা হিসাবেই অন্তর্ভুক্ত থাকে। প্রশ্ন হল যে, খাঁদ, নাগিনাসহ  পুরো সোনার ওপরই কি যাকাত ওয়াজিব হবে?
নাকি খাঁদ ও নাগিনার মূল্য নির্ধারণ পূর্বক আলাদাভাবে সেগুলোর যাকাত আদায় করতে হবে? 
উত্তরঃসোনার অলংকারের খাঁদ, নাগিনা ইত্যাদি ওজন এবং মূল্যে অন্তর্ভুক্ত হলেও যাকাত আদায়ের সময় কেবলমাত্র খাঁটি সোনার হিসাব অনুযায়ী যাকাত আদায় করতে হবে। খাঁদ ও নাগিনার মূল্যের ওপর যাকাত  আসবে।

"মুজাহিদের যাকাত প্রদান"
প্রশ্নঃ যেসব মুজাহিদ জিহাদের ময়দানে ইসলামের পক্ষে কাফের মুশরিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ চালিয়ে যাচ্ছে, তাদেরকে কি যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে?
উত্তরঃযাকাতের অর্থ তাদেরকে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।কেননা তাঁরাও যাকাত প্রাপকদের তালিকার মধ্যে একজন।

(অল্প স্বল্প করে যাকাত আদায় করা)
প্রশ্নঃকোনো কোনো ব্যবসায়ী একসঙ্গে যাকাত আদায় না করে সময় নিয়ে অল্পস্বল্প করে যাকাত আদায় করে থাকেন।তবে তারা ক্রমান্বয়ে পুরো সম্পদেরই যাকাত আদায় করে থাকেন। হিসাবপত্র খাতায় লেখে রেখে হিসাব অনুযায়ী সুবিধামত সময়ে যাকাত আদায় করে দেন।প্রকাশ থাকে যে,যাকাতের এই অর্থ তারা নিজ ব্যবসা-বাণ্যিজ্যেই লাগিয়ে রাখেন।এভাবে যাকাত আদায় করলে কি তা আদায় হবে?
উত্তরঃএভাবে যদি কোনো ব্যক্তি যাকাত আদায় করেন,তবে তা জায়েয হবে।কিন্তু এ ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে এবং একসঙ্গে আদায় করে দেয়াটাই উত্তম।[রাদ্দুল মুহতারঃ খন্ড -২,পৃষ্ঠা -১২,ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুমঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা -৯২,ইমদাদুল আহকামঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -২০]

(একাধিক গাড়ির  যাকাত )
প্রশ্নঃকারো কাছে একাধিক গাড়ি থাকলে সেসবেও কি যাকাত ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃব্যবহারের জন্য কোনো ব্যক্তির কাছে একাধিক গাড়ি থাকলেও তাতে  যাকাত ওয়াজিব নয়। তবে ব্যবসার নিয়তে কোনো গাড়ি ক্রয় করা হলে তাতে যাকাত ওয়াজিব হবে।

(ভাড়া বাড়ির যাকাত)
প্রশ্নঃভাড়ায় দেয়া বাড়ির ওপর কি যাকাত ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃভাড়ায় প্রদত্ত বাড়ির ওপর যাকাত ওয়াজিব নয়। কিন্তু ভাড়াবাড়ি থেকে মাসিক বা বার্ষিক ভাড়ায় যে অর্থ উসুল হবে, তা মূল নগদ ক্যাশের সঙ্গে যোগ করার পর নিসাবের মালিক হলে বছর শেষে এই নিসাবের ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে। [ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃখন্ড - ৬ পৃষ্ঠা -৫২,  ইমদাদুল ফাতাওয়াহঃ খন্ড-২,পৃষ্ঠা-১৭]

(ঋণপ্রার্থীকে যাকাত দেয়া)
প্রশ্নঃকোনো ব্যক্তি কারো কাছে ঋণের জন্য দ্বারস্ত হয়েছে। সম্ভাবনা রয়েছে এই ব্যক্তি ঋণ নিয়ে আর ফেরত দেবে না। এই ব্যক্তিকে ঋণ দেয়ার কথা বলে যদি যাকাতের নিয়তে টাকা দিয়ে দেয়া হয়,তাহলে কি যাকাত আদায় হয়ে যাবে?
উত্তরঃহ্যাঁ এভাবে তাকে টাকা দিলেও  যাকাত আদায় হয়ে যাবে।তবে ঋণ দেয়ার সময়-ই যাকাতের নিয়ত করে নিতে হবে। সেই সঙ্গে মনে মনে এই নিয়ত ও করে নিতে হবে যে, যদি এই ব্যক্তি টাকা ফেরত দেয়ার জন্য নিয়েও আসে তাহলে সে তা ফেরত নেয়া হবে না। এমনটি করা হলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে।

"(ব্যাংক সঠিক খাতে যাকাতের অর্থ ব্যয় না করলে)"
প্রশ্নঃঅনেক সময় দেখা যায় ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার যাকাতের যে অর্থ কর্তন করে নিয়ে থাকে, পরবর্তীতে তা যাকাতের সঠিক খাতে
ব্যবহার করা হচ্ছে কি না তা নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।অনিশ্চিত অবস্থায় এভাবে কি যাকাত আদায় হবে?
উত্তরঃএক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল যে,ব্যাংকের মাধ্যমে সরকার যাকাতের যে অর্থ কর্তন করে নেয়;তা কর্তন করে নেয়া মাত্রই যাকাত আদায় হয়ে যাবে। রাষ্ট্রের দায়িত্ব হবে এই টাকা যথাযথ খাতে ব্যয় করা।রাষ্ট্র সঠিক ব্যয় না করলে এর জন্য সরকার গোনাহগার হবে।এতে করে  যাকাত দাতার যাকাত আদায়ে কোনো প্রভাব পড়বে না।

(যাকাতের তারিখ পরিবর্তন প্রসঙ্গে)
প্রশ্নঃকোনো ব্যক্তি যাকাত আদায়ের নির্দিষ্ট তারিখ পরিবর্তন করতে চাইলে সে কি তা করতে পারবে?
উত্তরঃপ্রত্যেক ব্যক্তির যাকাত প্রদানের তারিখ সেদিন থেকেই নির্দিষ্ট হবে,যেদিন সে নিসাবের মালিক হয়েছে।একবার যাকাতের তারিখ নির্দিষ্ট হওয়ার পর পরবর্তীতে তা পরিবর্তন করা অনুচিত।

(প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নিলে তার হুকুম)
প্রশ্নঃ কোনো ব্যক্তি যদি ঋণ হিসেবে কোম্পানি থেকে তার নিজ প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নেয় ; তাহলেএটি কি ঋণ হিসেবে সাব্যস্ত হবে?
উত্তরঃকোনো ব্যক্তি নিজের প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে ঋণ নিলে ঋণের টাকা নিজের সামগ্রিক আয়ের সঙ্গে যোগ করতে হবে। নিসাব পূর্ণ হলে এক্ষেত্রে ও যাকাত আদায় করতে হবে। কেননা বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটি ঋণ মনে হলে ও এ টাকার মালিক মূলতঃ সে নিজেই।

(যাকাত আদায়ে নিয়ত শর্ত )
প্রশ্নঃএক ব্যক্তি নিজের কোনো কর্মচারীকে তার সন্তানের বিয়ের জন্য ২৫ হাজার টাকা দিয়ে ১০ হাজার টাকা তাকে যাকাত হিসাবে দেয়ার কথা জানিয়ে দিল।অবশিষ্ট টাকা যাকাতের হওয়া সত্ত্বেও তা অন্যকে দেওয়ার ইচ্ছা করল।এমতাবস্থায় সেই ১৫ হাজার টাকা ফেরত পাওয়ার পর অন্যদের দেওয়ার সময়ও কি দ্বিতীয়বার যাকাতের নিয়ত করতে হবে?
উত্তরঃহ্যাঁঃপ্রথমেই যদি দশ হাজার টাকা যাকাতের নিয়তে আর অবশিষ্ট টাকা ঋণের নিয়তে দেয়া হয়ে থাকে, তাহলে এমনটি করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা নেই। দশ হাজার টাকা যাকাত বাবদ আদায় হয়ে যাবে। অবশিষ্ট পনের হাজার টাকা যাকাত হিসেবে আদায় হয় নাই। ওই টাকা উসুল হওয়ার পর পুনরায় যাকাতের নিয়তে আদায় করলে যাকাত আদায় হবে।

"(নিজ কর্মচারীকে যাকাত দেয়া ")
প্রশ্নঃ নিজ কর্মচারীকে কি যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে?কর্মচারীর জন্যও কি নিসাবের মালিক না হওয়া জরুরি?

উত্তরঃনিজের কর্মচারী বা অন্য যে কাউকে নিসাবের মালিক না হলে যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েজ আছে। অবশ্য কর্মচারীকে প্রদত্ত টাকা তার মজুরী থেকে কেটে দেয়া জায়েয হবে না।এমনকি কর্মচারী বেতন বৃদ্ধির দাবি জানালে তাকে একথা বলে বিরত করা যাবে না যে,তোমাকে তো আমি যাকাতের টাকা দিয়েছি।মোটকথা কর্মচারীর বেতনে যাকাতের কোনো প্রভাব পড়তে পারবে না। [রাদ্দুল মুহতারঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা -৭২, ফাতাওয়ায়ে দারুলউলুমঃখন্ড-৬,পৃষ্ঠা -২৪৫]

(যাকাতের টাকায় ঘর নির্মাণ করে গরীবদেরকে থাকতে দেয়া)
প্রশ্নঃআমাদের সহকর্মীদের একটি সংস্থা রয়েছে।সংস্থার সদস্যদের মধ্যে কেউ কেউ খুবই দানবীর।আমরা সংস্থার পক্ষ থেকে একখন্ড জমি ক্রয় করেছি। আমাদের ইচ্ছা হল,যাকাতের টাকার দ্বারা এই জমির ওপর ঘর নির্মাণ করে সেখানে দুঃস্থ গরীবদের কে থাকার জায়গা ব্যবস্থা করে দেব।জানার বিষয় হল,যাকাতের টাকায় নির্মিত ঘর অথবা ফ্ল্যাট যদি নিম্নের শর্তসমূহ অনুযায়ী উপযুক্ত গরীব লোকদের মধ্যে বন্টন করে দেয়া হয়,তাহলে কি যাকাত প্রদানকারীদের যাকাত আদায় হবে?

উত্তরঃ শর্তসমূহ
এক.ফ্ল্যাট অথবা ঘর এই শর্তে প্রদান
করা হবে যে,গ্রহন কারী কমপক্ষে পাঁচবছর পর্যন্ত এটি কারো কাছে বিক্রয় করতে পারবে না
দুই.ফ্ল্যাটটি অথবা ঘরটি শুধু ব্যবহারের জন্য দেওয়া হবে,সেখানে কোনো ভাড়াটিয়া রাখা যাবে না।পজিশনে হস্তান্তর করা যাবে না। অন্য কাউকে সাময়িক ব্যবহারের জন্যও দিতে পারবেনা।
তিন.উক্ত ফ্ল্যাট অথবা ঘরটি কারো কাছে ভাড়া দেওয়ার তথ্য প্রমান পাওয়ার সাথে সাথে ঘর বা দোকানের মালিকানা রহিত হয়ে যাবে।
চার.ফ্ল্যাট এবং ঘরের দেখাশোনা করা এবং মেরামত খরচের জন্য সংস্থা কর্তৃক নির্ধারিত রশিদ বহির মাধ্যমে নিয়মিতভাবে মাসিক চাঁদা পরিশোধ করতে হবে।
পাঁচ.ফ্ল্যাট অথবা ঘর অন্য কোনো ফ্ল্যাট অথবা ঘরের মালিকের সঙ্গে বদলী করা যাবে না।
ছয়.বিল্ডিং-এর ছাদ বিল্ডিং প্রদানকারী সংস্থার নিয়ন্ত্রণাধীন ও আয়ত্বে থাকবে।
সাথ.ভবিষ্যতে ফ্ল্যাট অথবা ঘর বিক্রি অথবা ছেড়ে দেয়ার সময় সংস্থার অনুমোদন সার্টিফিকেট অর্জন করার পরই তা বৈধ বলে বিবেচিত হবে।
আট.উল্লিখিত শর্তসমূহ ছাড়াও সংস্থার পক্ষ থেকে সময়ে সময়ে জারিকৃত বিধানসমূহ এবং শর্তসমূহ মেনে চলা জরুরি হবে।সংস্থার পক্ষ থেকে জারিকৃত বিধিবিধান ও শর্তাবলী লংঘনকারীর ফ্ল্যাট বরাদ্দ বাতিল হিসেবে গন্য হবে।আর সংস্থা তার ফ্ল্যাট এবং ঘর খালি করতে পারবে।
উত্তরঃযাকাত তখনই আদায় হবে যখন অভাবগ্রস্থকে যাকাতের সম্পদের মালিক বানিয়ে দেয়া হবে। প্রদত্ত যাকাতের সম্পদের সাথে যাকাত প্রদানকারীর কোনো সংশ্লিষ্টতা ও সম্পর্কই থাকতে পারবে না।
প্রশ্নে উল্লিখিত শর্তাবলি পর্যালোচনা করল দেখা যায়,যাকাতের বাড়ি বা ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে এমন অনেকগুলো শর্তারোপ করা হয়েছে,যা যাকাতগ্রহীতার মালিকানাধীন করে দেয়ার পরিপন্থী।উল্লিখিত শর্তাবলীর সাথে যাকাতের টাকায় নির্মিত ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি কাউকে দেয়া হলে যাকাত আদায় হবে না।যাকাত আদায়ের পদ্ধতিই হল যাদেরকে ফ্ল্যাট অথবা বাড়ি দেয়া হয়েছে,তাদেরকে মালিক বানিয়ে দেয়া।সেইসাথে তাদের কাছে উক্ত জায়গার কাগজপত্র বুঝিয়ে এই অধিকার দিয়ে দেয়া যে,এরা এই ফ্ল্যাট এবং বাড়ি ইচ্ছামাফিক ব্যবহার করতে পারবে।তাদের মালিকানায় কেউ হস্তক্ষেপ করবে না।যাকাত  প্রদানকারীদের পক্ষথেকে তাদের ওপর কোনো বাধ্যবাধকতা থাকবে না। যদি তাদেরকে এই অধিকার দেয়া না হয়,তাহলে যাকাত প্রদানকারীদের যাকাত আদায় হবে না; বরং তাদের পুনরায় যাকাত আদায় করা অত্যাবশ্যক হবে।[ফাতাওয়ায়ে রহীমীয়াঃখন্ড-৫,পৃষ্ঠা -১৫১]

(যাকাতের টাকায় ছাত্রদের বেতন-ভাতা দেয়া)
প্রশ্নঃমাদ্রাসাসমূহে এতিম-গরীব ছাত্রদের  বেতন-ভাতা হিসেবে তাদের খাওয়া-দাওয়া ও নিত্য প্রয়োজনীয় কাজে জনপ্রতি মাসে পাঁচশ বা হাজার টাকা হারে দেয়া হয়ে থাকে।পরবর্তীতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভর্তি ফি এবং খাওয়া- দাওয়ার জন্য সেই টাকা তার কাছ থেকে আদায় করে নেয়।এই পদ্ধতির অনুসরণে কি যাকাত আদায় হবে?
উত্তরঃ যাকাতের টাকা এজাতীয় ছাত্রদের দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক চালুকৃত নিয়মটিও শরীয়ত সম্মত।এতে কোনো দোষ নেই।

"(শেয়ারে বার্ষিক লভ্যাংশে যাকাত")
প্রশ্নঃ শেয়ারের লভ্যাংশে যাকাত ওয়াজিব হবে কি?
উত্তরঃ এতে অনেকের সংশয় থাকলেও এ বিষয়ে শরীয়তের বিধান হল যে,যাকাত আদায়ের তারিখে সমুদয় টাকার ওপর যাকাত ওয়াজিব। সেই টাকা যে কোনো উপায়েই অর্জিত হোকনা কেন।শেয়ারের বার্ষিক লভ্যাংশ,উপহার উপঢৌকনের মাধ্যমে প্রাপ্ত টাকা কিংবা ব্যবসার মাধ্যমে উপার্জিত টাকা ইত্যাদি সবগুলোতেই যাকাত ওয়াজিব।

(শেয়ারের মূল্য কোনটি গ্রহণযোগ্য)
প্রশ্নঃকোনো ব্যক্তি বিক্রয় করার উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করার পর শেয়ারের বাজার দরে ধ্বস নেমে আসায় সেই ব্যক্তি তার শেয়ার বিক্রয় করা থেকে বিরত রইল।এই মুহূর্তে যদি তার যাকাত আদায়ের নির্দিষ্ট তারিখ এসে যায়, তাহলে সে কি শেয়ারের প্রকৃত মূল্যমান না বাজার দর অনুযায়ী যাকাত আদায় করবে?
উত্তরঃশেয়ারের বর্তমান বাজার মূল্য অনুযায়ী যাকাত আদায় করবে।ক্রয়কৃত মূল্যে যাকাত আদায়ের কোনো প্রয়োজন নেই।


"(প্রয়োজন অতিরিক্ত আসবাবপত্র থাকা সত্ত্বেও যাকাত দেয়া")
প্রশ্নঃএক ব্যক্তির বাড়িতে দৃশ্যত প্রয়োজনীয় যাবতীয় আসবাবপত্র,টিভি,ভিসিয়ার ইত্যাদি  সবকিছুই আছে।তথাপি ওই ব্যক্তি অসুস্থ্যতার দরুণ,ছেলে মেয়েদের শিক্ষাদীক্ষার খরচ চালাতে এবং বিবাহশাদী দিতে দারুন অর্থনৈতিক সংকটে নিপতিত।লজ্জার কারণে এই ব্যক্তি কারো কাছে হাত পাততেও পারছে না।প্রশ্ন হল যে,এজাতীয় ব্যক্তিকে যাকাতের টাকা দেয়া শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে কি?
উত্তরঃএক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান হল যে, প্রকৃত অর্থেই যদি এই ব্যক্তি এ জাতীয় কাজ সম্পাদনে টাকাকড়ির মুখাপেক্ষী হয়,তাহলে সর্বপ্রথম এই ব্যক্তি টিভি,ভিসিয়ার বিক্রয় করে টাকার ব্যবস্তা করবে।এজাতীয় অপ্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বিক্রয় করার পরও যদি ওই ব্যক্তি যাকাতের হকদার হয়,তাহলে তাকে যাকাতের অর্থ দেয়ার সুযোগ রয়েছে।
এক্ষেত্রে আরো একটি পন্থা অবলম্বনের সুযোগ রয়েছে,আর তা হল,যে ব্যক্তির কাছে টিভি,ভিসিয়ার  রয়েছে,তাকে তো যাকাতের টাকা দেয়া যাবে না। তবে তার স্ত্রী অথবা প্রাপ্তবয়স্ক কোনো সন্তান যে নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয়, তাকে যাকাতের টাকা দেয়া যেতে পারে।


"(টাকার পরিবর্তে রোগীকে ঔষধ প্রদান করা")
প্রশ্নঃঅসুস্থ ব্যক্তি একেবারে দরিদ্র ও সহায় সম্বলহীন। সাইয়েদ বংশের নয়।ডাক্তার সাহেব কি নিজ যাকাতের অর্থের পরিবর্তে তাকে ঔষধ দিতে পারবে?
উত্তরঃকোনো দরিদ্র ব্যক্তি অসুস্থ্য হয়ে পড়লে টাকার পরিবর্তে তাকে ঔষধ ক্রয় করে দিলে যাকাত আদায় হয়ে যাবে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যে, রোগী আসলেই দরিদ্র ও যাকাতের হকদার কি না।[আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪, পৃষ্ঠা -২৮১]

" (কিশোরীদের অলংকারে যাকাতের বিধান ")
প্রশ্নঃকোনো কোনো সময় মাতা-পিতা নিজের ছোট মেয়েদের কে অলংকার ইত্যাদি দিয়ে থাকেন। এদের আয় উৎপাদনের কোনো মাধ্যম থাকে না।
মাতা-পিতা নাবালেগ কন্যাদের কে এই অলংকার এমনভাবে দিয়ে থাকেন যে, তা আর কখনোই তার কাছ থেকে নেয়া হয় না কিংবা অন্য কাউকে দেয়াও হয় না।এই অবস্তায় নাবালেগ সন্তানরা কীভাবে অলংকারের যাকাত আদায় করবে?

উত্তরঃএমনটি হলে এই অলংকারে কোনো যাকাত আসবে না।কেননা শরীয়ত নাবালেগের ওপর যাকাত ফরয করে নাই।কিন্তু কন্যা সন্তান বালেগ হলে স্বয়ং মেয়ের জন্য যাকাত আদায় করা ফরজ হবে।তার আমদানির কোনো উৎস না থাকলে হয়তো বা মাতা-পিতাকে তার অনুমতি সাপেক্ষে যাকাত আদায় করে দিতে হবে। তা সম্ভব না হলে অলংকার বিক্রয় করে যাকাত আদায় করতে হবে।
[ফাতাওয়ায়ে মাহমূদীয়াঃখন্ড-১১,পৃষ্টা-১২৬]

[অলংকার বিক্রয় করে যাকাত আদায় করলে তো এক সময় তা শেষ হয়ে যাবে।]
প্রশ্নঃপ্রতি বছর অলংকার বিক্রয় করে যাকাত আদায় করতে থাকলে একসময় তো অলংকারই শেষ হয়ে যাবে?

উত্তরঃ এ শংকা এবং প্রশ্ন অনেকের হলেও  এজাতীয় শংকা প্রকাশ করা যথার্থ নয়।কেননা সোনার নিসাব হচ্ছে সারে ৭তোলা বা ততোর্ধো সোনায়।যখন সোনা সাড়ে ৭ তোলার কম হবে তখন তো আর এর ওপর যাকাতই ওয়াজিব হবে না।অতএব এজাতীয় শংকার কোনো ভিত্তি নেই।
[রাদ্দুল মুহতারঃ খন্ড-২,পৃষ্ঠা-৩১,ফাতাওয়ায়ে দারুল উলূমঃ খন্ড-৬,পৃষ্ঠা -২৮৫]

"(যে বোর্ডিং যাকাত ও ছাত্র প্রদত্ত টাকায় চলে")

প্রশ্নঃদ্বীনি মাদ্রাসাসমূহে যেসব টাকাকড়ি এবং গরু-বকরী,ভেড়া,দুম্বা ইত্যাদি যাকাত- সদকা এবং খয়রাত হিসাবে আসে,সেগুলো ব্যয় করার পদ্ধতি কি?বিশেষতঃমাদ্রাসার বোর্ডিংয়ে ছাত্রদের রান্নাবান্নাএকত্রে হয়ে থাকে। যারা ধনী ছাত্র তারা টাকা দিয়ে বোর্ডিংয়ে খানা খেয়ে থাকে।আর মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দরিদ্র ছাত্রদের যাকাতের টাকা থেকে ফ্রি  খাবার ব্যবস্থা করা হয়। এভাবে যাকাতের অর্থ গরীব ছাত্রদের ফ্রি খানা এবং নগদ অর্থে ধনী ছাত্রদের ক্রয়কৃত খানা একই সঙ্গে পরিবেশন করা জায়েয হবে কি?
উত্তরঃ দ্বীনি মাদ্রাসাগুলোতে দান হিসেবে যাকাত -সদকা টাকাকড়ি বা গরু-ছাগল,ভেড়া,দুম্বা,ইত্যাদি যা দেওয়া হয়,যাকাতের হকদার গরীব ছাত্রদের পোশাক-পরিচ্ছেদ,বই-পুস্তক, ও বোর্ডিংয়ের খানা ইত্যাদিতে তা খরচ করতে পারবে। যাকাতের টাকা দ্বারা গরীব ছাত্রদের যে বোর্ডিং  পরিচালিত হয় তাতে এক সঙ্গে ধনী ছাত্র ও শিক্ষকগন টাকা দিয়ে ও খানা খেতে পারবে না।তবে যাকাত-সদকার টাকা শরয়ী বিধান মতে হিলায়ে তামলীকের পর বোর্ডিংয়ে খরচ করা হলে ধনী ছাত্র ও শিক্ষকগন উক্ত বোর্ডিংয়ে একত্রে খেতে পারবে।
[আয়াত রইছে]
[দুররুল মুখতার,খন্ড - ২,পৃষ্ঠা-১৩,ফাতাওয়ায়ে দারুল উলুম,খন্ড -৬,পৃষ্ঠা ৬৩/২০৮, আযীযুল ফাতাওয়া,পৃষ্ঠা -৪৩২, কিফায়াতুল মুফতি খন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৮৫]

"(নির্দিষ্ট তারিখে হিসাব করে যাকাতের অর্থ পৃথক করা জরুরি ‌")
প্রশ্নঃবিয়েশাদী উপলক্ষ্যে প্রাপ্ত উপহার উপঢৌকনের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয়ে গেল। পরবর্তী বছর একই সময় পর্যন্ত যদি ওই ব্যক্তি নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক থাকে,তাহলে তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।দেখতে দেখতে পরবর্তী বছর ওই তারিখ টি এসে গেল,কিন্তু রমযান আসতে তখনো পাঁচ মাস বাকি।এই অবস্থায় ওই ব্যক্তি কি রমযান আসলেই একসঙ্গে এক বছরের যাকাত আদায় করবে,নাকি অন্য কোনো পন্থা অবলম্বন করবে?

উত্তরঃওই ব্যক্তি এমনটি করতে পারে যে,যেদিন বছর পূর্ণ হয়ে যাবে,হিসাব করে ওইদিন এক বছরের যাকাত নির্দিষ্ট করে নেবে।অতঃপর সময় সুযোগ বুঝে তা আদায় করতে থাকবে।রমযান পর্যন্ত যাকতের অর্থ  ব্যয়ের প্রকৃত খাত পাওয়া না গেলে
যাকাতের যে পরিমাণ টাকা আদায় করা বাকি রয়ে গেছে, তা রমযান মাসে আদায় করে দেবে।কিন্তু যদি তাৎক্ষণিক ভাবে যাকাতের খাত পাওয়া যায়,এবং যাকাত প্রত্যাশিও উপস্থিত থাকে,তাহলে রমযান পর্যন্ত অপেক্ষা করা উচিত হবে সর্বাবস্থায় মুখাপেক্ষীদের হাতে তাৎক্ষণিকভাবে যাকাতের টাকা দিয়ে দিলে ইনশাআল্লাহ  সওয়াবের প্রত্যাশা করা যায়।

"(পজিশনের টাকার যাকাত")
প্রশ্নঃকোনো ব্যক্তি পজিশনে ঘর ক্রয়  করে তা ভাড়ায় দিয়ে দিল।প্রশ্ন হল যে, এ ব্যক্তি যাকাত কীভাবে আদায় করবে?
উত্তরঃএই প্রশ্নের জবাব হল এই যে,শরীয়তে পজিশনে ক্রয় বিক্রয়ের কোনো ভিত্তি নেই। বরং ভাড়ার লেনদেন জায়েয আছে।সুতরাং পজিশন যাকাত যোগ্য কোনো জিনিস নয়।বরং যে ঘর ভাড়ায় দেওয়া হয়েছে।তা থেকে ভাড়া হিসেবে যে টাকা উপার্জিত হবে,এক বছর পূর্ণ হলে,এবং নিসাব পরিমাণ হলে ভাড়ার ওই টাকার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে।

"(ব্যবসায়িক সুনামের ভিত্তিতে বিক্রিত বিল্ডিংয়ে যাকাত")
প্রশ্নঃ এক ব্যক্তির একটি বিল্ডিং ছিল ওই ব্যক্তি।বিল্ডিংটি গুডউইল অর্থাৎ ব্যবসায়িক সুনামের ভিত্তিতে বিক্রয় করে। প্রশ্ন হল যে,এক্ষেত্রে কি তার ওপর যাকাত ওয়াজিব হবে?
উত্তরঃ বিল্ডিং গুডউইলের ওপর ভিত্তি করে বিক্রয় করা হোক বা অন্য যেকোনো পন্থায়,যখন কারো কাছে নগদ টাকা থাকে তখন ওই নগদ টাকার ক্ষেত্রে শরীয়তের যে বিধান প্রযোজ্য হয়,এক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম ঘটবে না।অর্থাৎ নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে বছর শেষে হিসাব করে যাকাত আদায় করে দিতে হবে।

"(ঋণের টাকা ফেরত পাওয়ার আশা না থাকলে")
প্রশ্নঃ কোনো ব্যক্তি নিজ কোনো পন্য বাকীতে বিক্রয় করল।পার্টি পন্যটির বকেয়া মূল্য পরিশোধে বেশ গড়িমসি করছে, এক্ষেত্রে শরীয়তের বিধান কী?প্রকাশ থাকে যে,এজাতীয় বকেয়া ঋণের ক্ষেত্রে সাধারণত দুই ধরনের অবস্থার মুখামুখি হতে হয়।
এক.বকেয়া পণ্যগ্রহিতা সবসময় বলতে থাকে আমি পন্যটির বকেয়া অর্থ  পরিশোধ করে দিব বা দিচ্ছি।কিন্তু আসলে সে তা পরিশোধ করছে না। দুই.বাকিতে পন্যগ্রহিতা পরিষ্কার ভাষায় জানিয়ে দেয় যে, সে তার ঋণের অর্থ দিতে পারবেনা কিংবা সে সবসময় অনুপস্তিত থেকে ধরা ছোয়ার বাইরে  থাকে কিংবা তার মৃত্যু হয়ে গিয়ে থাকে।ঋণের ক্ষেত্রে  উল্লিখিত অবস্থাগুলো বিরাজ করতে থাকলে,এজাতীয় ঋণের অর্থের ব্যাপারে যাকাতের বিধান কী?
উত্তরঃ কোনো ব্যক্তি ঋণ নেওয়ার পর ফেরত দিতে অস্বীকার করল।কিংবা ঋনগ্রহিতা ও উধাও হয়ে গেল।এই টাকা ফেরত প্রাপ্তির আর কোনো আশা ভরসা নেই। এজাতীয় পরিস্থিতির উদ্ভব হলে এই টাকায় যাকাত ওয়াজিব হবে না। কিন্তু কোনো ব্যক্তি যদি এমনটি বলতে থাকে যে,আমি তোমার ঋণের টাকা পরিশোধ করবো,তাহলে তার এদাবি বাহ্যিকভাবে মেনে নিয়ে,এ টাকার যাকাতের অর্থ হিসাব করে বের করতে হবে। যদিও তাৎক্ষণিক ভাবে এর যাকাত আদায় করা জরুরি নয়। কিন্তু টাকা ফেরত পাওয়ার পর পূর্ববর্তী বছরগুলোর যাকাত হিসাব করে আদায় করে দিতে হবে।
[রাদ্দুল মুহতারঃখন্ড-২,পৃষ্ঠা-১০।ফাতাওয়ায়ে দারুলউলুম খন্ড-৬পৃষ্ঠা-৭৭,আহসানুল ফাতাওয়াঃখন্ড-৪,পৃষ্ঠা-২৬০]

0 Reviews: